কি কি দেখে মোবাইল কিনতে হয়? জেনেনিন কিছু টিপস!

নতুন মোবাইল কিনছেন? জেনেনিন কোন বিষয়গুলো দেখে আপনার জন্য বাজারের সেরা মোবাইল টি পছন্দ করবেন

আধুনিক যুগে মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কিন্তু কি কি দেখে মোবাইল কিনতে হয় তা জানেন কি? । যোগাযোগ রক্ষা করা থেকে শুরু করে বিনোদন, শিক্ষা, ব্যবসা এবং আরও অনেক কিছুর জন্য আমরা এই ছোট ডিভাইসটির উপর নির্ভরশীল। বাজারে বিভিন্ন দাম এবং ফিচারের অসংখ্য মোবাইল ফোন উপলব্ধ থাকায়, সঠিক ফোনটি বেছে নেওয়া বেশ কঠিন। একটি ভুল সিদ্ধান্ত আপনার অর্থ এবং সময় উভয়ই নষ্ট করতে পারে। তাই, একটি নতুন মোবাইল ফোন কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা অপরিহার্য। তাই চলুন সেই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক যাতে আপনি আপনার জন্য বাজারের সেরা ফোনটি বাছাই করতে পারেন।

বাজেট নির্ধারণ করা

টাকা
সর্বপ্রথম বাজেট নির্ধারণ করুন | Photo by Alexander Mils on Unsplash

নতুন মোবাইল কেনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাজেট নির্ধারণ করা। কারণ এতে বাজারে থাকা হাজার হাজার মোবাইল এর মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট মোবাইল আপনার সামনে চলে আসবে এবং সঠিক ফোন নির্ধারণ করা সহজ হয়ে যাবে। আপনার সাধ্যের মধ্যে কোন ফোনগুলো রয়েছে, তা আগে থেকে ঠিক করে নিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। বাজারে স্বল্প বাজেটের ফোন থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম সেগমেন্টের ফোনও পাওয়া যায় যার দাম আলদা আলাদা আপনি কোন দামের মধ্যে ফোন ব্যবহার করবেন তা আপনার বাজেট এর উপর নির্ভর করবে। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করুন।

বাজেট নির্ধারণ করার সময় শুধু ফোনের দাম নয়, আনুষাঙ্গিক খরচ যেমন – স্ক্রিন প্রোটেক্টর, ব্যাক কভার এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সার্ভিসিংয়ের খরচও মাথায় রাখা উচিত। বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন স্টোরে নিয়মিত ডিসকাউন্ট এবং অফার চলতে থাকে, তাই কেনার আগে ভালোভাবে খোঁজ খবর নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও দেখুনঃ মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

অপারেটিং সিস্টেম (OS)

অপারেটিং সিস্টেম
অপারেটিং সিস্টেমের বিষয়টি পছন্দ এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে।

বর্তমানে বাজারে প্রধানত দুটি অপারেটিং সিস্টেম জনপ্রিয় – অ্যান্ড্রয়েড (Android) এবং আইওএস (iOS)। এই দুটি অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে আপনি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।

  • অ্যান্ড্রয়েড (Android): অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম যা বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত হয়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি অত্যন্ত কাস্টমাইজযোগ্য। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী থিম, ওয়ালপেপার, উইজেট এবং এমনকি পুরো ইন্টারফেস পরিবর্তন করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপলের তুলনায় বেশি সংখ্যক অ্যাপ রয়েছে বিভিন্ন কাজের জন্য এবং বিভিন্ন দামের ফোন বাজারে পাওয়া যায়। ফাইল ম্যানেজমেন্ট এবং ডিভাইসগুলোর মধ্যে ডেটা ট্রান্সফারও তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে, অ্যান্ড্রয়েড আপডেটের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায় কারণ এটি বিভিন্ন ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির উপর নির্ভরশীল। কিছু পুরনো মডেলে নিয়মিত আপডেট নাও পাওয়া যেতে পারে।
  • আইওএস (iOS): আইওএস অ্যাপলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম এটি শুধুমাত্র অ্যাপলের ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর ব্যবহারকারী বান্ধব ইন্টারফেস, ভালো পারফরম্যান্স এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইওএস ব্যবহার করা খুব সহজ এবং এর ইন্টারফেস খুবই ইউজার-ফ্রেন্ডলি। অ্যাপলের নিজস্ব অ্যাপ স্টোরে উচ্চ মানের এবং কিউরেটেড অ্যাপের একটি বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। আইফোনগুলো নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট পায় যা তাদের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সুরক্ষিত এবং আপ-টু-ডেট রাখে। তবে, আইওএস তুলনামূলকভাবে কম কাস্টমাইজযোগ্য এবং অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় এর ফাইল ম্যানেজমেন্ট কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইফোনগুলোর দামও সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড ফোনের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

আপনার যদি কাস্টমাইজেশনের সুযোগ এবং বিভিন্ন দামের মধ্যে পছন্দ করার স্বাধীনতা প্রয়োজন হয়, তাহলে অ্যান্ড্রয়েড আপনার জন্য ভালো সমাধান হতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনি একটি সহজ, সুরক্ষিত এবং মসৃণ অভিজ্ঞতা চান এবং আপনার বাজেট বেশি থাকে, তাহলে আইওএস একটি চমৎকার পছন্দ।

আরও দেখুনঃ ফোন হ্যাং করলে কি করবেন? জেনে নিন!

প্রসেসর এবং র‍্যাম (Processor and RAM)

প্রসেসর এবং র‍্যাম
একটি স্মার্টফোনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রসেসর এবং র‍্যাম

মোবাইল ফোনের প্রসেসর (Processor) হল তার মস্তিষ্ক এবং র‍্যাম (RAM) হল তার কর্মক্ষম মেমরি। এই দুটি জিনিস ফোনের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। একটি শক্তিশালী প্রসেসর এবং পর্যাপ্ত র‍্যাম থাকলে ফোন দ্রুত কাজ করবে, মাল্টিটাস্কিং (একাধিক অ্যাপ একসাথে ব্যবহার করা), গেম খেলা এবং ভারী অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা থেকে শুরু করে সকল কাজ করা সহজ হবে।

প্রসেসর (Processor): প্রসেসরের কোর সংখ্যা (যেমন – কোয়াড-কোর, অক্টা-কোর) এবং ক্লক স্পিড (GHz-এ মাপা হয়) যত বেশি হবে, ফোনের প্রসেসিং ক্ষমতা তত বেশি হবে। বিভিন্ন প্রসেসর প্রস্তুতকারক কোম্পানি যেমন – কোয়ালকম (Qualcomm), মিডিয়াটেক (MediaTek), স্যামসাং এর (Exynos ) এবং অ্যাপলের নিজস্ব বায়োনিক চিপ (Bionic chip) বাজারে উপলব্ধ। আপনার ব্যবহারের ধরনের উপর নির্ভর করে সঠিক প্রসেসর বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ ব্যবহারের জন্য একটি মিড-রেঞ্জের প্রসেসর যথেষ্ট হলেও, গেমিং বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো ভারী কাজের জন্য একটি শক্তিশালী প্রসেসরের প্রয়োজন।

র‍্যাম (RAM): র‍্যাম হল ফোনের ক্ষণস্থায়ী মেমরি যেখানে বর্তমানে ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন এবং ডেটা সংরক্ষিত থাকে। পর্যাপ্ত র‍্যাম থাকলে ফোন ল্যাগ করা বা হ্যাং করার সম্ভাবনা কমে যায় এবং মাল্টিটাস্কিং আরও কার্যকর হয়। বর্তমানে বাজারে ৪ জিবি থেকে শুরু করে ১২ জিবি বা তারও বেশি র‍্যামের ফোন পাওয়া যায়। আপনার যদি অনেক অ্যাপ একসাথে ব্যবহার করার বা ভারী গেম খেলার অভ্যাস থাকে, তাহলে ৮ জিবি বা তার বেশি র‍্যামের ফোন বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারণ ব্যবহারের জন্য ৪ জিবি বা ৬ জিবি র‍্যাম যথেষ্ট হতে পারে।

স্টোরেজ (Storage)

স্টোরেজ
আপনার ব্যাবহার এর উপর নির্ভর করে স্টোরেজ পছন্দ করুন

মোবাইল ফোনে আপনার ছবি, ভিডিও, অ্যাপস এবং অন্যান্য ফাইল সংরক্ষণের জন্য স্টোরেজের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন স্টোরেজ ক্যাপাসিটির ফোন পাওয়া যায়, যেমন – ৬৪ জিবি, ১২৮ জিবি, ২৫৬ জিবি, ৫১২ জিবি এবং এমনকি ১ টিবি পর্যন্ত। আপনার ব্যবহারের ধরনের উপর নির্ভর করে সঠিক স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বেছে নেওয়া উচিত।

যদি আপনি প্রচুর ছবি, ভিডিও তোলেন বা অনেক অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাহলে ১২৮ জিবি বা তার বেশি স্টোরেজের ফোন বেছে নেওয়া ভালো হবে। কিছু ফোনে এক্সটার্নাল মেমরি কার্ড ব্যবহারের সুযোগ থাকে, যার মাধ্যমে আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী স্টোরেজ বাড়াতে পারবেন। ফোন কেনার সময় এই বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া উচিত। তবে, কিছু ফ্ল্যাগশিপ ফোনে এখন আর মেমরি কার্ডের স্লট থাকে না।

ডিসপ্লে (Display)

ডিসপ্লে
একটি ভালো ডিসপ্লের ফোন ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা উন্নত করে

মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে বা স্ক্রিন আমাদের ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ডিসপ্লের আকার, রেজোলিউশন এবং প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে দেখার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। এমনকি খারাপ ডিসপ্লের ফোন দীর্ঘদিন বাবহারের ফলে আপনার চোখেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আকারঃ বর্তমানে বিভিন্ন আকারের ডিসপ্লের ফোন পাওয়া যায়। আপনার হাতের আকার এবং ব্যবহারের সুবিধার উপর নির্ভর করে আপনি ছোট, মাঝারি বা বড় আকারের ডিসপ্লে বেছে নিতে পারেন। ছোট ডিসপ্লের ফোন বহন করা সহজ হলেও, মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট দেখা বা টাইপ করার ক্ষেত্রে বড় ডিসপ্লে বেশি সুবিধা দেয়।

রেজোলিউশনঃ ডিসপ্লের রেজোলিউশন যত বেশি হবে, ছবি এবং টেক্সট তত স্পষ্ট এবং ডিটেইলড দেখাবে। বর্তমানে এইচডি (HD), ফুল এইচডি (Full HD), কিউএইচডি (QHD) এবং আরও উন্নত রেজোলিউশনের ডিসপ্লে যুক্ত ফোন পাওয়া যায়। ভালো দেখার অভিজ্ঞতার জন্য ফুল এইচডি বা তার বেশি রেজোলিউশনের ডিসপ্লে বেছে নেওয়া উচিত।

প্রযুক্তিঃ ডিসপ্লে প্রযুক্তির মধ্যে প্রধানত এলসিডি (LCD) এবং অ্যামোলেড (AMOLED) উল্লেখযোগ্য। অ্যামোলেড ডিসপ্লে সাধারণত আরও উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত রঙ এবং গভীর কালো দেখাতে সক্ষম। এর পাশাপাশি এটি কম ব্যাটারি খরচ করে। এলসিডি ডিসপ্লেও ভালো কোয়ালিটি দিতে পারে, তবে অ্যামোলেডের মতো কন্ট্রাস্ট এবং রঙের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে থাকে। আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে আপনি ডিসপ্লের প্রযুক্তি বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও, রিফ্রেশ রেট (Refresh Rate) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১২০ হার্জ বা তার বেশি রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লে স্ক্রলিং এবং অ্যানিমেশনকে আরও মসৃণ করে তোলে, বিশেষ করে গেমিং এবং দ্রুত গতির কনটেন্ট দেখার ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যামেরা (Camera)

ক্যামেরা
ছবি বা ভিডিও করার জন্য ভালো ক্যামেরা দেখে ফোন নির্বাচন করুন

বর্তমানে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা শুধু ছবি তোলার জন্যই নয়, ভিডিও কল, ডকুমেন্ট স্ক্যান এবং আরও অনেক কিছুর জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্যামেরার মেগাপিক্সেল (Megapixel) সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও, ছবির গুণমান শুধু এর উপর নির্ভর করে না। অ্যাপারচার (Aperture), সেন্সর সাইজ, লেন্সের গুণমান এবং সফটওয়্যার অপটিমাইজেশনও ছবির গুণমানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মেগাপিক্সেলঃ মূলত, মেগাপিক্সেল হলো ছবির রেজোলিউশনের মাপকাঠি। এর সংখ্যা যত বেশি, ছবিতে ডিটেইলও তত বেশি থাকে এবং এটি বড় প্রিন্টের জন্য ভালো। তবে মনে রাখবেন, কম আলোয় ভালো ছবি পেতে বড় সেন্সর এবং ভালো অ্যাপারচার বেশি জরুরি।

অ্যাপারচারঃ লেন্সের ভেতরে আলো প্রবেশের জন্য যে ছিদ্রটি থাকে, তাকে অ্যাপারচার বলে। এই ছিদ্রের আকার পরিবর্তন করে ক্যামেরায় প্রবেশ করা আলোর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অ্যাপারচারের মান যত কম হয় (যেমন f/1.8, f/2.0), লেন্সের আলো গ্রহণের ক্ষমতা তত বাড়ে এবং স্বল্প আলোতেও ভালো ছবি তোলা সম্ভব হয়।

লেন্সঃ আজকালকার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের লেন্স দেখা যায়—যেমন ওয়াইড-এঙ্গেল, আলট্রা-ওয়াইড, টেলিফটো ও ম্যাক্রো লেন্স। আলাদা পরিস্থিতিতে ভালো ছবি তোলার জন্য এই লেন্সগুলো খুব দরকারি। আপনি কী ধরনের ছবি তোলেন, তার ওপর নির্ভর করে একাধিক লেন্সযুক্ত ফোন বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

ভিডিও রেকর্ডিংঃ যদি আপনি প্রায়ই ভিডিও করে থাকেন, তাহলে  4K, 60fps-এর মতো ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষমতা এবং OIS/EIS-এর মতো স্ট্যাবিলাইজেশন ফিচার আছে কিনা তা দেখে নিন।

ব্যাটারি (Battery)

ব্যাটারি
দীর্ঘ সময় ধরে ফোন চালু রাখতে বেশি mAh এর ব্যাটারি দরকার

মোবাইল ফোনের ব্যাটারি লাইফ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি শক্তিশালী ব্যাটারি আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে ফোন ব্যবহার করার সুবিধা দেবে এবং বারবার চার্জ করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে। ব্যাটারির ক্ষমতা মিলিঅ্যাম্পিয়ার-আওয়ারে (mAh) মাপা হয়। যত বেশি mAh, ব্যাটারি তত বেশি সময় ধরে চলবে।

আপনার ব্যবহারের ধরনের উপর নির্ভর করে ব্যাটারির ক্ষমতা নির্বাচন করা উচিত। যদি আপনি সারাদিন ফোন ব্যবহার করেন, যেমন – কল করা, ইন্টারনেট ব্যবহার করা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করা, তাহলে ৪০০০ mAh বা তার বেশি ব্যাটারির ফোন বেছে নেওয়া ভালো। এছাড়াও, ফাস্ট চার্জিং (Fast Charging) প্রযুক্তি এখন বেশ জনপ্রিয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব কম সময়ে ফোন চার্জ করা যায়। ফোন কেনার সময় ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট আছে কিনা তা জেনে নেওয়া উচিত।

আরও দেখুনঃ মোবাইল এর ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

কানেক্টিভিটি (Connectivity)

কানেক্টিভিটি
মোবাইলের কানেক্টিভিটি খারাপ হলে ব্যবহারের অভিজ্ঞতাও খারাপ হবে

মোবাইল ফোনের কানেক্টিভিটির বিষয়গুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অথবা দুটি সিম কার্ড ব্যবহারের সুবিধা আপনার প্রয়োজন অনুসারে আছে কিনা, তা নিশ্চিত হয়ে নিন। যেহেতু এখন 4G এবং 5G নেটওয়ার্ক বিদ্যমান, তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে 5G সমর্থন করে এমন একটি ফোন নির্বাচন করুন। দ্রুত এবং স্থিতিশীল সংযোগের জন্য অত্যাধুনিক ফোনগুলোতে লেটেস্ট Wi-Fi এবং Bluetooth প্রযুক্তি থাকা উচিৎ। যদি কন্টাক্টলেস পেমেন্ট বা অন্যান্য ডিভাইস সংযোগের জন্য NFC-এর প্রয়োজন হয়, তবে সেই বৈশিষ্ট্যটিও বিবেচনা করতে ভুলবেন না।

বিল্ড কোয়ালিটি এবং ডিজাইন (Build Quality and Design)

বিল্ড কোয়ালিটি এবং ডিজাইন
ফোনটি কতোটা মজবুত এবং দেখতে কেমন তা দেখা জরুরী

মোবাইল ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি এবং ডিজাইন তার স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারের অভিজ্ঞতার উপর প্রভাব ফেলে। ফোন তৈরির জন্য ব্যবহৃত উপাদান (যেমন – গ্লাস, মেটাল, পলিকার্বোনেট) ফোনের প্রিমিয়াম লুক এবং টেকসইতা নির্ধারণ করে। পেছনে গ্লাস দেয়া ফোন দেখতে আকর্ষণীয় হলেও, পড়ে গেলে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অন্যদিকে, মেটাল বা পলিকার্বোনেটের ফোন তুলনামূলকভাবে বেশি টেকসই হয়।

ফোনের ডিজাইনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার হাতের আকারের সাথে মানানসই এবং ব্যবহার করতে আরামদায়ক ডিজাইন বেছে নেওয়া উচিত। এছাড়াও, ফোনের ওজন এবং গ্রিপও কেমন অনেক সময় ধরে ব্যাবহার করলে কোন সমস্যা হবে কিনা সেটা বিবেচনা করুন। এছাড়া ওয়াটার এবং ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স (IP Rating) একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার যা আপনার ফোনকে পানি এবং ধুলোবালি থেকে রক্ষা করতে পারে এটি আছে কিনা চাইলে বিবেচনা করতে পারেন।

ব্র্যান্ড এবং আফটার-সেলস সার্ভিস (Brand and After-Sales Service)

ব্র্যান্ড এবং আফটার-সেলস সার্ভিস
ভালো কোম্পানির মোবাইল কিনুন

মোবাইল কেনার সময় কোন ব্রান্ডের মোবাইল কিনছেন ব্র্যান্ডের খ্যাতি কেমন এবং আফটার-সেলস সার্ভিস সম্পর্কে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড সাধারণত ভালো কোয়ালিটির ফোন এবং নির্ভরযোগ্য সার্ভিসিং প্রদান করে। কেনার আগে সেই ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টার আপনার এলাকায় আছে কিনা এবং তাদের কাস্টমার সাপোর্ট কেমন তা জেনে নেওয়া উচিত। অনলাইনে এবং বন্ধুদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা জেনে আপনি একটি ধারণা পেতে পারেন।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য (Special Features)

বিশেষ বৈশিষ্ট্য
বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার প্রয়োজন কিনা তা বিবেচনা করুন

কিছু মোবাইল ফোনে বিশেষ কিছু অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য থাকে যা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যেমন –

ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরঃ ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর সরাসরি স্ক্রিনের উপরেই থাকে তাই ফোন আনলক করার জন্য ফোনের পিছনের দিকে বা পাশে আঙ্গুল নিয়ে যেতে হয় না।

ফেস আনলকঃ এই প্রযুক্তি আপনার মুখটিকে চিনতে পারে এবং এর মাধ্যমেই আপনার ফোনটি খুলে যায়।

ওয়্যারলেস চার্জিংঃ তারের ঝামেলা ছাড়াই আপনার ফোনটিকে চার্জ দেওয়ার সুযোগ।

রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিংঃ এই চমৎকার ফিচারের মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনটিকে একটি চার্জিং প্যাডের মতো ব্যবহার করে অন্যান্য ছোট ডিভাইস, যেমন স্মার্টওয়াচ বা ওয়্যারলেস ইয়ারফোন চার্জ করতে পারবেন।

গেমিং ফিচারঃ কিছু বিশেষ স্মার্টফোনে গেমিং-এর জন্য আলাদা মোড, উন্নত তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং আরামদায়ক ডিজাইন দেওয়া হয়, যা গেম খেলার অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।

শেষ কথা

একটি নতুন মোবাইল ফোন কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ এবং অনেকগুল টাকার বাপার। তাই, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনা করলে আপনি অবশ্যই আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী সঠিক ফোনটি খুঁজে নিতে পারবেন। বিভিন্ন মডেলের স্পেসিফিকেশন এবং রিভিউ তুলনা করুন, সম্ভব হলে ফোনটি নিজের হাতে ধরে দেখুন এবং তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, সবচেয়ে দামি ফোনটিই সবসময় আপনার জন্য সেরা হবে না। আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং ব্যবহারের ধরনের উপর নির্ভর করে কোন ফোনটি আপনার জন্য সেরা। তাই, মোবাইল কেনার আগে উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখুন।

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Most Voted
Newest Oldest
Inline Feedbacks
View all comments