আপনি কি প্রায়শই মাঝরাতে ঘুম ভাঙার সমস্যায় ভোগেন? ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা হয়, এমনকি এর থেকে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকেরই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় এবং এরপর আর সহজে ঘুম আসে না। এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।
চলুন জেনে নিই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণ কি এবং এর প্রতিকার।
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
মাঝরাতে ঘুম ভাঙার কারণ

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে স্ট্রেস ও উদ্বেগ অন্যতম, যা দৈনন্দিন জীবনের চাপ, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে হতে পারে। এই অবস্থায় স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল (Cortisol) নিঃসরণ হয়ে মাঝরাতে ঘুম ভাঙাতে পারে।
শোবার ঘরের পরিবেশও ঘুমের ওপর বড় প্রভাব ফেলে – যদি ঘরে অতিরিক্ত আলো বা শব্দ থাকে, তাপমাত্রা খুব গরম বা ঠান্ডা হয়, কিংবা বিছানা আরামদায়ক না হয়, তাহলে ঘুম ব্যাহত হতে পারে।
এছাড়া, ঘুমানোর আগে খাদ্যাভ্যাস ও পানীয় গ্রহণের বিষয়েও সচেতন থাকা জরুরি। বিশেষ করে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (যেমন চা বা কফি), অ্যালকোহল বা ভারী খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং ঘুম ভেঙে যেতে পারে। শারীরিক কিছু সমস্যা যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea), রেস্টলেস লেগস সিন্ড্রোম (Restless Legs Syndrome), দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা (Chronic Pain) বা ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা মাঝরাতে ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
এছাড়াও, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম হালকা হয়ে যায় এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ঘুম ভাঙার প্রবণতা বেড়ে যায়। আধুনিক জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ব্যবহার। ঘুমানোর আগে এসব ডিভাইস ব্যবহারের ফলে নির্গত নীল আলো (Blue Light) মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুম আসার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এসব কারণ মিলেই অনেক সময় মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়।
আরও দেখুনঃ গাড়িতে চড়লেই বমি পায়? জেনে নিন সমাধান!
মাঝরাতে ঘুম ভাঙার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

মাঝরাতে ঘুম ভাঙার সাধারণ কারণগুলো তো জেনে নিলেন কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কি করবেন? চলুন এটাও জেনে নেই যে মাঝরাতে ঘুম ভাঙার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও কিছু সহজ পদক্ষেপের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, এমনকি ছুটির দিনেও, আপনার শরীরের বায়োলজিক্যাল ঘড়িকে (Circadian Rhythm) নিয়মিত করতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, আপনার শোবার ঘরকে আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ হিসেবে গড়ে তুলুন। ঘর অন্ধকার, শান্ত এবং তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা রাখুন। আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করলে ঘুমের মান উন্নত হবে।
খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর দিন এবং ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল পরিহার করুন। রাতে ভারী খাবার খাবেন না এবং ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন।
অন্যদিকে, শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ালে ঘুমের মান উন্নত হয়, তবে ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ঘুমের জন্য অপরিহার্য। যোগাআসন, মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ (Deep Breathing Exercises) এর মতো কৌশলগুলি স্ট্রেস কমাতে এবং ঘুমের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার বন্ধ করুন। মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট এবং কম্পিউটার থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light) ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় তাই ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে এগুলো ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
যদি উপরের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করার পরেও আপনার সমস্যা থেকে যায়, তবে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। একজন চিকিৎসক আপনার সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।
মাঝরাতে ঘুম ভাঙা একটি হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে সঠিক পদক্ষেপ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একটি ভালো ঘুম শুধু আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত জরুরি।