আমরা সবাই জানি সূর্যের আলো আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, দিনের শুরু থেকে প্রকৃতির কিরণ আমাদের চারপাশকে আলোকিত করে রাখে। তবে এই আলোর একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে – ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays), যা আমাদের ত্বকের জন্য নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে ত্বক পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এই বিপদ থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রধান হাতিয়ার হলো সানস্ক্রিন এবং সানব্লক। কিন্তু এই দুটি কি একই জিনিস, নাকি এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে? কোনটা আমাদের ত্বকের জন্য বেশি উপযোগী?
তাই, আজকে আমরা সানস্ক্রিন এবং সানব্লকের ভেতরের কথা জানব। কীভাবে তারা কাজ করে, তাদের মধ্যেকার পার্থক্য কী, এবং আপনার ত্বকের জন্য কোনটি সেরা, তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
সানস্ক্রিন (Sunscreen)

সানস্ক্রিন হলো এক অদৃশ্য জালের মতো। যখন আপনি ত্বকে সানস্ক্রিন মাখেন, তখন এই জালের মতো সুরক্ষা স্তরটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিগুলোকে হয় শুষে নেয়, না হয় ভেঙে দেয়। এর ফলে, ক্ষতিকারক রশ্মিগুলো আপনার ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে না এবং ত্বক সুরক্ষিত থাকে। সানস্ক্রিনে বিশেষ কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে, যাদেরকে কেমিক্যাল ফিল্টার বলা হয়। এই রাসায়নিক ফিল্টারগুলোই মূলত সেই অদৃশ্য জাল তৈরি করে এবং ত্বককে সূর্যের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।
সানব্লক (Sunblock)

অন্যদিকে, সানব্লক অনেকটা আয়নার মতো কাজ করে। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি যখন ত্বকের উপর এসে পড়ে, তখন সানব্লক সেগুলোকে প্রতিফলিত করে ফিরিয়ে দেয়। ফলে রশ্মিগুলো আর ত্বকের ভেতরে ঢুকতে পারে না। সাধারণত সানব্লক তৈরিতে জিঙ্ক অক্সাইড(Zinc Oxide) এবং টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইডের(Titanium Dioxide) মতো প্রাকৃতিক খনিজ ব্যবহার করা হয়, যা ত্বককে বাহ্যিকভাবে সুরক্ষা দেয় এবং ফিজিক্যাল ফিল্টার হিসেবে কাজ করে।
তাহলে কোনটা ভালো?
আসলে, দুটোই ভালো এবং দুটোই আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে একটি অন্যটির চেয়ে বেশি উপযোগী হতে পারে
ত্বকের ধরন
যাদের ত্বক খুব সংবেদনশীল বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের জন্য মিনারেল-ভিত্তিক সানব্লক (যেমন জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড যুক্ত) তুলনামূলকভাবে ভালো। কারণ এগুলো ত্বকের সাথে কম বিক্রিয়া করে। যাদের ত্বক সাধারণ, তারা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
কার্যকারিতা
দুটোই সূর্যের UVA এবং UVB রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে যদি সেগুলো সঠিক SPF (Sun Protection Factor) যুক্ত হয়। SPF আসলে নির্দেশ করে যে একটি সানস্ক্রিন বা সানব্লক কতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে সানবার্ন থেকে রক্ষা করতে পারবে।
টেক্সচার
সানস্ক্রিন সাধারণত হালকা হয় এবং ত্বকের সাথে সহজে মিশে যায়। সানব্লক একটু ঘন হতে পারে এবং লাগানোর পর হালকা সাদাটে ভাব দেখা যেতে পারে, যদিও এখন অনেক উন্নত ফর্মুলার সানব্লক পাওয়া যায় যা সহজে মিশে যায়।
ব্যবহারের নিয়ম
আপনি যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি
- রোদে বের হওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে সানস্ক্রিন বা সানব্লক মাখুন।
- প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর, বা ঘামলে বা জল লাগলে আবার লাগান।
- শুধু মুখ নয়, হাত, পা এবং শরীরের অন্যান্য খোলা অংশেও লাগান।
- SPF ৩০ বা তার বেশি যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
শেষ কথা হলো, সানস্ক্রিন হোক বা সানব্লক, যেটা আপনার ত্বকের সাথে মানানসই এবং যেটা আপনি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারবেন, সেটাই আপনার জন্য সেরা। তাই আর দেরি না করে, আজই আপনার ত্বকের জন্য সঠিক সুরক্ষা বেছে নিন!
বি. দ্রঃ ব্যবহারের আগে পণ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়াটা খুবই জরুরি। ভুল বা ভেজাল পণ্য ব্যবহার করলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
যদি কোনো অংশ বুঝতে অসুবিধা হয় বা অন্য কিছু জানতে চান, তাহলে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতে পারেন!