পৃথিবীতে কোন পাসওয়ার্ডগুলো মানুষ সবথেকে বেশি ব্যাবহার করেছে জানেন কি?

জেনেনিন, সবথেকে বেশি ব্যাবহার করা পাসওয়ার্ডগুলো সম্পর্কে এবং কেন এই পাসওয়ার্ডগুলো এত বেশি ব্যবহৃত হয়?

অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। আর এই সুরক্ষার প্রথম ধাপ হলো একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা। কিন্তু আমরা অনেকেই নিরাপত্তার গুরুত্ব না বুঝে এমন কিছু পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি, যা হ্যাকারদের কাজকে অনেক সহজ করে দেয়।

বিভিন্ন সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার গবেষণা এবং ডেটা অ্যানালাইসিস থেকে প্রতি বছরই একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে দেখা যায় কোন পাসওয়ার্ডগুলো মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। আর মজার ব্যাপার হলো, এই তালিকার বেশিরভাগ পাসওয়ার্ডই দুর্বল এবং অনুমানযোগ্য।

তাহলে চলুন, জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাসওয়ার্ডগুলো কী এবং কেন এগুলো বিপদজনক।

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ২০টি পাসওয়ার্ড

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ২০টি পাসওয়ার্ড
দেখেনিন, সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ২০টি পাসওয়ার্ড কোনগুলো | Photo by Mourizal Zativa on Unsplash
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত, যেমন NordPass এবং CyberNews-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি যে পাসওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে শীর্ষে থাকা কয়েকটি পাসওয়ার্ড হলো –
  • 123456 – এটি বহু বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দুর্বলতম পাসওয়ার্ড হিসেবে শীর্ষে রয়েছে।
  • Admin – ওয়েবসাইট বা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিন প্যানেলে এটি ডিফল্ট পাসওয়ার্ড হিসেবে প্রায়ই ব্যবহৃত হয়, যা হ্যাকারদের জন্য একটি সহজ লক্ষ্য।
  • 12345678 – ছয়-সংখ্যার পাসওয়ার্ড থেকে আরেকটু লম্বা কিন্তু সাধারণ ভাবেই অনুমান করা সহজ।
  • 123456789 – ক্রমিক সংখ্যার এই প্যাটার্নটি হ্যাকারদের কাছে খুবই পরিচিত।
  • 12345 – ছয়-সংখ্যার পাসওয়ার্ডের চেয়েও সংক্ষিপ্ত এবং আরও দুর্বল একটি সংস্করণ।
  • 1234567890 – সম্পূর্ণ ১০টি ক্রমিক সংখ্যার এই প্যাটার্নটিও খুব সাধারণ।
  • Password – ‘পাসওয়ার্ড’ শব্দটি নিজেই পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং সহজে অনুমানযোগ্য একটি পাসওয়ার্ড।
  • 1234567 – আগের পাসওয়ার্ডগুলোর মতোই একটি সহজ সংখ্যা অনুক্রম।
  • Root – এটিও ‘admin’-এর মতোই বিশেষত লিনাক্স-ভিত্তিক সিস্টেমে বা নেটওয়ার্ক রাউটারে ডিফল্ট পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • Unknown – অনেক সময় ব্যবহারকারীরা একটি নতুন ডিভাইস সেটআপ করার সময় এটিকে ডিফল্ট পাসওয়ার্ড হিসেবে রেখে দেয়।
  • Test – এটিও একটি ডিফল্ট পাসওয়ার্ড, যা প্রায়শই টেস্টিং বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং পরে পরিবর্তন করা হয় না।
  • Password123 – ‘password’ শব্দের সঙ্গে সহজ সংখ্যা যুক্ত করার একটি সাধারণ প্যাটার্ন।
  • Qwerty – কিবোর্ডের প্রথম ছয়টি অক্ষর। সহজে টাইপ করার জন্য অনেকেই এটি ব্যবহার করেন।
  • 1234 – আরও সংক্ষিপ্ত ও চরম দুর্বল একটি সংখ্যা প্যাটার্ন।
  • User – এটিও ‘admin’ বা ‘root’-এর মতোই অনেক সিস্টেমে ডিফল্ট ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড হিসেবে থাকে।
  • Admin – ‘admin’-এর মতো, তবে প্রথম অক্ষরটি বড় হাতের। হ্যাকাররা সহজেই উভয় সংস্করণই পরীক্ষা করে।
  • 12345678910 – ১০ পর্যন্ত ক্রমিক সংখ্যার এই প্যাটার্নটি আগের গুলোর মতোই দুর্বল।
  • Admin123 – ‘admin’ শব্দের সঙ্গে সংখ্যা যুক্ত করে তৈরি করা একটি সাধারণ পাসওয়ার্ড।
  • Iloveyou – ব্যক্তিগত আবেগ বা সহজ শব্দ ব্যবহার করার প্রবণতাও অনেক দেখা যায়।
  • 123456789123 – আরও লম্বা কিন্তু একইভাবে অনুমানযোগ্য একটি সংখ্যা সিরিজ।

আরও দেখুনঃ মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

কেন এই পাসওয়ার্ডগুলো এত বেশি ব্যবহৃত হয়?

কেন এই পাসওয়ার্ডগুলো এত বেশি ব্যবহৃত হয়?
কেন এই পাসওয়ার্ডগুলো এত বেশি ব্যবহৃত হয়? জানেন কি! | Photo by Babyman Works on Unsplash

দুর্বল ও সহজে অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ডগুলো এত বেশি ব্যবহৃত হওয়ার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে, যার মূল কারণ হলো মানুষের অভ্যাস এবং সুবিধার প্রতি অগ্রাধিকার। প্রথমত, ব্যবহারকারীরা এমন পাসওয়ার্ড বেছে নেন যা সহজে মনে রাখা যায়, যেমন ‘123456’, ‘password’ অথবা নিজেদের নাম। তারা মনে করেন, এতে পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু এই একই সুবিধা হ্যাকারদেরও কাজে লাগে। স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রামের (bots) মাধ্যমে তারা এই ধরনের সাধারণ পাসওয়ার্ডগুলো সেকেন্ডের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখতে পারে, যা ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। 

দ্বিতীয়ত, দ্রুত টাইপ করার সুবিধার জন্য অনেকেই সংখ্যা বা কিবোর্ডের প্যাটার্নগুলো ব্যবহার করেন। এই প্যাটার্নগুলো দ্রুত টাইপ করা যায় বলে এটি অনেক ব্যবহারকারীর কাছে সুবিধাজনক মনে হয়। তারা নিরাপত্তার চেয়ে দ্রুত কাজ সারার দিকেই বেশি মনোযোগ দেন। সবশেষে, সৃজনশীলতার অভাব একটি বড় কারণ। অনেকে পাসওয়ার্ড তৈরির সময় নতুন কিছু চিন্তা করতে চান না এবং সহজলভ্য ও প্রচলিত প্যাটার্নগুলোই বারবার ব্যবহার করেন। এই মানসিকতা থেকেই একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা যায়, যা একটি পাসওয়ার্ড ফাঁস হলে সব অ্যাকাউন্টকে বিপদে ফেলে।

নিরাপদ পাসওয়ার্ড তৈরির কিছু টিপস

পাসওয়ার্ড
সবসময় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন | Image by Freepik
দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনি নিজেকে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। হ্যাকাররা সাধারণত ব্রুট-ফোর্স বা অভিধান(Dictionary) আক্রমণের মতো কৌশল ব্যবহার করে এই ধরনের পাসওয়ার্ডগুলো মুহূর্তেই ভেঙে ফেলতে পারে। তাই আপনার অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সহজ টিপস মেনে চলতে পারেন –
  • কমপক্ষে ২০ অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এতে বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন (যেমন – !, @, #, $, %) ব্যবহার করুন।
  • আপনার নাম, জন্মতারিখ, পোষা প্রাণীর নাম, বা কীবোর্ডের প্যাটার্ন (যেমন – ‘qwerty’ বা ‘asdfgh’) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • আপনার প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। যদি একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাকও হয়, তাহলে বাকিগুলো সুরক্ষিত থাকবে।
  • সব পাসওয়ার্ড মনে রাখা কঠিন। তাই একটি নির্ভরযোগ্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার জন্য জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি ও সংরক্ষণ করবে।
  • এটি আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার জন্য একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। পাসওয়ার্ড জানার পরেও অন্য কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না।

নিজের ডিজিটাল জীবন সুরক্ষিত রাখতে পাসওয়ার্ডের গুরুত্বকে অবহেলা করা উচিত নয়। একটু সচেতনতা আপনাকে অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Most Voted
Newest Oldest
Inline Feedbacks
View all comments