আম শুধু একটি সুস্বাদু ফলই নয়, এর খোসাতেও আছে ত্বকের জন্য অনেক উপকারী উপাদান। আমরা সাধারণত আমের খোসা ফেলে দিই, কিন্তু এটি ত্বকের যত্নে দারুণভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা ত্বককে উজ্জ্বল, দাগমুক্ত ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, ত্বকের যত্নে আমের খোসা কীভাবে ব্যবহার করবেন
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
আমের খোসার ফেস মাস্ক

প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং দাগ কমাতে আমের খোসার ফেস মাস্ক খুবই কার্যকরী। এটি তৈরি করতে আপনার প্রয়োজন হবে ২ চামচ শুকনো আমের খোসার গুঁড়ো (আমের খোসা ভালোভাবে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে), ১ চামচ বেসন, এবং পরিমাণমতো দুধ অথবা গোলাপ জল।
প্রথমে একটি বাটিতে সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেস্ট মুখে ও গলায় সমানভাবে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। মাস্ক শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এই ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে আপনি দ্রুত ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং দাগ কমার মতো চমৎকার ফল পাবেন।
আরও দেখুনঃ সানস্ক্রিন নাকি সানব্লক কোনটি ব্যবহার করবেন?
ব্রণ কমাতে আমের খোসার ব্যবহার

ব্রণের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য আমের খোসা হতে পারে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক সমাধান। আমের খোসায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে এবং ত্বকে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল ও ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এই ফেস প্যাকটি তৈরি করতে প্রয়োজন হবে একটি তাজা আমের খোসা। চাইলে এর সঙ্গে আধা চামচ নিম পাতার গুঁড়োও মেশানো যায়, যা এটির কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রথমে আমের খোসাগুলো ছোট ছোট টুকরো করে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর তাতে নিম পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ব্রণের ওপর সরাসরি লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। নির্ধারিত সময় পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে এই প্রাকৃতিক ফেস প্যাকটি ব্রণের লালচেভাব, জ্বালা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে এবং ত্বককে আরও পরিষ্কার ও সতেজ করে তুলবে।
সানট্যান দূর করতে আমের খোসা

রোদে পোড়া ত্বক বা সানট্যান দূর করতে আমের খোসা একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এজন্য প্রয়োজন হবে ২ চামচ শুকনো আমের খোসার গুঁড়ো এবং ১ চামচ টক দই। এই দুটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন।
এরপর সেই পেস্টটি রোদে পোড়া ত্বকের ওপর লাগিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। টক দই ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে আমের খোসার গুঁড়ো ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের ট্যান দূর হয়ে ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে স্ক্রাব

আমের খোসা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন একটি ঘরোয়া ফেস স্ক্রাব, যা বানানো খুব সহজ। ১ চামচ শুকনো আমের খোসার গুঁড়ো বা ছোট ছোট টুকরা, ১ চামচ মধু এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি মুখে আলতো করে বৃত্তাকার ভাবে ২-৩ মিনিট স্ক্রাব করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্রাকৃতিক স্ক্রাবটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এক্সফোলিয়েট করে এবং ত্বককে করে তোলে আরও উজ্জ্বল ও সতেজ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- যেকোনো নতুন উপাদান ত্বকে ব্যবহারের আগে হাতে বা কানের পেছনে প্যাচ টেস্ট করে নিন, যাতে কোনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া না হয়।
- সবুজ আমের খোসার চেয়ে পাকা আমের খোসা বেশি উপকারী।
- আমের খোসা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত ব্যবহারে আপনি নিজেই পার্থক্য দেখতে পাবেন।
আমের খোসা ফেলে না দিয়ে এভাবে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে দেখুন। এটি আপনার ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।