বর্তমান সময়ে ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করি। পড়াশোনা থেকে শুরু করে অফিসিয়াল কাজ, বিনোদন – সব কিছুতেই ল্যাপটপের প্রয়োজন হয়। আর এই ল্যাপটপের কার্যকারিতার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তার ব্যাটারি। একটি ভালো ব্যাটারি আপনার ল্যাপটপের আয়ু বাড়াতে এবং নির্বিঘ্নে কাজ করতে সহায়তা করে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যাটারির সঠিক যত্নের বিষয়ে উদাসীন থাকি, যার ফলে খুব দ্রুতই ব্যাটারির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। ল্যাপটপের ব্যাটারি ভালো রাখার জন্য কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা খুব জরুরি।
চলুন জেনে নিই এমন ৫টি সহজ উপায় যা আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারিকে রাখবে দীর্ঘস্থায়ী ও সচল।
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
১০০% চার্জ এড়িয়ে চলুন

আমরা অনেকেই মনে করি যে ল্যাপটপকে ১০০% পর্যন্ত চার্জ দিলে তা ভালো কাজ করবে কিংবা ব্যাটারি বেশি সময় ধরে চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এটি ল্যাপটপের ব্যাটারির জন্য একেবারেই উপকারী নয়। আজকাল ল্যাপটপে ব্যবহৃত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলেও, এগুলোকে ১০০% চার্জ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হলে ব্যাটারির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে ব্যাটারির ক্ষমতা হ্রাস করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটারিকে সবসময় ২০% থেকে ৮০% এর মধ্যে চার্জ রাখতে পারলে তা ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অর্থাৎ, যখন ব্যাটারির চার্জ ২০% এর নিচে নেমে আসে, তখনই চার্জ দেওয়া উচিত। আর যখন ব্যাটারির চার্জ ৮০% এ পৌঁছায়, তখনই চার্জার খুলে ফেলা উত্তম। এই নিয়ম মেনে চললে আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি অনেক দিন ভালো থাকবে।
আরও দেখুনঃ মোবাইল এর ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়
অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে বাঁচান

ল্যাপটপের ব্যাটারির সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অতিরিক্ত তাপমাত্রা। যখন ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তখন এর ব্যাটারির ভেতরে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো দ্রুত ক্ষয় হতে শুরু করে। এর ফলে ব্যাটারির আয়ু হ্রাস পায় এবং এক সময়ে এটি তার কার্যক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলে। অনেক সময় দেখা যায়, ল্যাপটপ মাত্র কিছুক্ষণ ব্যবহার করলেই গরম হয়ে যায়, আর এতে ব্যাটারির ক্ষতি হয় অজান্তেই।
তাই, ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন ডিভাইসটির নিচের দিকের বায়ু চলাচলের পথগুলো কখনোই বন্ধ না হয়। অনেকেই বিছানায় কিংবা নরম কিছুর ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করে থাকেন, যা ল্যাপটপের নিচের অংশ গরম হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রয়োজনে ল্যাপটপ কুলিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন, যা অতিরিক্ত গরম হওয়া রোধে সহায়তা করে এবং ব্যাটারির স্থায়িত্ব ধরে রাখতে সাহায্য করে।
চার্জে দিয়েই একটানা ব্যবহার করবেন না

অনেক ব্যবহারকারী আছেন যারা ল্যাপটপ চার্জে লাগানো অবস্থাতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন। যদিও এটি কিছুটা সুবিধাজনক মনে হতে পারে, তবে এই অভ্যাসটি ল্যাপটপের ব্যাটারির স্বাস্থ্যের জন্য একদমই ভালো নয়। যখন ল্যাপটপ পুরোপুরি চার্জ হয়ে যায় এরপরও চার্জার সংযুক্ত থাকে, তখন ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হতে পারে। এর ফলে ব্যাটারির উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ পড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এমনকি ব্যাটারির আয়ু কমে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
তাই ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময়, যখন ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে যায়, তখন চার্জার খুলে নিয়ে ব্যাটারির উপর নির্ভর করে কাজ করাই উত্তম। ব্যাটারির চার্জ ২০% এর নিচে কমে এলে তখন আবার চার্জে দিয়ে ব্যবহার করা উচিত। সঠিকভাবে ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে এর স্থায়িত্ব ও কার্যক্ষমতা অনেক দিন ধরে ধরে রাখা সম্ভব।
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বন্ধ রাখুন

আপনার ল্যাপটপে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হওয়ার একটি বড় কারণ হলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন। যত বেশি অ্যাপস ব্যাকগ্রাউন্ডে চলবে, তত বেশি প্রসেসর ও RAM ব্যবহার হবে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটারির উপর চাপ বাড়বে এবং চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। তাই ল্যাপটপের ব্যাটারি সেভ করার জন্য অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসগুলো বন্ধ করে দিন। এতে শুধু ব্যাটারির চার্জই সাশ্রয় হবে না, আপনার ল্যাপটপের পারফরম্যান্সও উন্নত হবে – যেমন দ্রুত সফটওয়্যার চালু হওয়া, কম হ্যাং হওয়া ইত্যাদি।
আপনি সহজেই টাস্ক ম্যানেজারের মাধ্যমে এই প্রোগ্রামগুলো চিহ্নিত করে বন্ধ করতে পারেন। Windows ব্যবহারকারীরা Ctrl + Shift + Esc চাপলে সরাসরি Task Manager খুলে ফেলতে পারবেন। আর macOS ব্যবহারকারীরা Command + Spacebar চাপার পর “Activity Monitor” লিখে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন কোন অ্যাপস বা প্রসেসগুলো বেশি রিসোর্স ব্যবহার করছে। সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামগুলো নির্বাচন করে বন্ধ করে দিন।
ব্যাটারি সেভিং মোড ব্যবহার করুন

প্রায় সব ল্যাপটপেই ব্যাটারি সেভিং মোড বা পাওয়ার সেভিং অপশন থাকে, যা বিশেষভাবে ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই মোড চালু করলে ল্যাপটপের কিছু ফিচার যেমন প্রসেসরের স্পীড, স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট এবং ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কার্যক্রম সীমিত হয়ে যায়, ফলে ব্যাটারির ওপর চাপ কমে। এর ফলে আপনার ল্যাপটপ কিছুটা ধীরগতির মনে হতে পারে, তবে জরুরি পরিস্থিতিতে – যেমন যখন আপনি বাইরে রয়েছেন বা নিকটবর্তী কোনো বিদ্যুৎ উৎস নেই তখন এই মোডে ব্যাবহার করুন।
এছাড়াও, ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা (brightness) কমিয়ে রাখা ব্যাটারির ব্যবহার কমায়। বেশিরভাগ সময় আমরা ল্যাপটপের স্ক্রিন অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক উজ্জ্বল করে রাখি, যা ব্যাটারির দ্রুত খরচের অন্যতম কারণ। উজ্জ্বলতা প্রয়োজনে সামান্য কমিয়ে দিলেই বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া, যদি আপনার ল্যাপটপে কীবোর্ড ব্যাকলাইট থাকে এবং আপনি অন্ধকারে কাজ না করে থাকেন, তাহলে সেটি বন্ধ রাখাও ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর একটি কার্যকর উপায়।
এই সহজ উপায়গুলো মেনে চললে আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং আপনি আপনার ল্যাপটপের সেরা পারফরম্যান্স উপভোগ করতে পারবেন। ল্যাপটপের ব্যাটারির যত্ন নিয়ে আপনার আর কোনো প্রশ্ন আছে কি?