ছাদের ওপর কিংবা রাস্তার পাশে চকচক করা জিনিসটা নিয়ে – ভাবছেন, এই জিনিসটা আসলে কী করে? সূর্যের আলো এসে পড়লেই এটা বিদ্যুৎ বানিয়ে দেয়, ব্যাপারটা যেন একটু ম্যাজিকের মতো, তাই না?
তাহলে চলুন, আজ সেই ম্যাজিকের পেছনের বিজ্ঞানটা একটু সহজ করে জেনে নেওয়া যাক।
সোলার প্যানেলের মূল কাজটা করে তার ভেতরে থাকা এক বিশেষ জিনিস – সোলার সেল এর মাধ্যমে। এই সেলগুলো দেখতে ছোট ছোট বর্গাকার বা আয়তাকার টুকরোর মতো। একটা সোলার প্যানেলে অনেকগুলো সেল একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই সোলার সেলগুলো সূর্যের আলো পেলে কী এমন করে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয়? এর উত্তর লুকিয়ে আছে আলোর ছোট ছোট কণা – ফোটনের মধ্যে। সূর্যের আলো আসলে অসংখ্য ফোটনের স্রোত। যখন এই ফোটনগুলো সোলার সেলের ওপর এসে পড়ে, তখন তারা তাদের শক্তি সোলার সেলের ভেতরে থাকা কিছু বিশেষ পদার্থের (যেমন সিলিকন) ইলেকট্রনের কাছে পৌঁছে দেয়।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম – ধরুন, আপনি একটা বল ছুড়লেন আর সেই বলটা গিয়ে অন্য একটা বলকে ধাক্কা দিলো। প্রথম বলের শক্তিটা দ্বিতীয় বলের মধ্যে চলে গেল। সোলার সেলের ভেতরেও ফোটনগুলো ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেয় আর সেই ধাক্কায় ইলেকট্রনগুলো তাদের জায়গা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে।
কিন্তু শুধু ইলেকট্রন বেরিয়ে এলেই তো আর বিদ্যুৎ তৈরি হয় না, তাই না? বিদ্যুৎ হলো ইলেকট্রনের একটা নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহ। সোলার সেলের ভেতরে এমন একটা ব্যবস্থা করা থাকে যাতে এই ছিটকে আসা ইলেকট্রনগুলো একটা নির্দিষ্ট পথে চলতে শুরু করে।
সোলার সেলের দুটো স্তর থাকে – একটা পজিটিভ চার্জযুক্ত আর একটা নেগেটিভ চার্জযুক্ত। যখন ফোটনের ধাক্কায় ইলেকট্রনগুলো মুক্ত হয়, তখন তারা নেগেটিভ স্তর থেকে পজিটিভ স্তরের দিকে ছুটতে শুরু করে। এই ইলেকট্রনের প্রবাহই হলো বিদ্যুৎ!

আরও দেখুনঃ কোন ধরণের সোলার সিস্টেম ভালো? জেনেনিন সোলার সম্পর্কে!
তাহলে দেখলেন তো, সোলার প্যানেল আসলে কোনো জাদু নয়, বরং পদার্থবিজ্ঞানের একটা চমৎকার প্রয়োগ। সূর্যের আলো সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তরিত হচ্ছে কোনো রকম শব্দ বা ধোঁয়া ছাড়াই – ভাবতেই অবাক লাগে!
এই বিদ্যুৎ সরাসরি ব্যবহার করা যায় আমাদের বাড়ির লাইট, পাখা, টিভি চালানোর জন্য। আবার অনেক সময় এই বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে জমা করে রাখা হয়, যাতে রাতে বা মেঘলা দিনেও ব্যবহার করা যায়।
সোলার প্যানেলের অনেক সুবিধা। প্রথমত, এটা পরিবেশবান্ধব – সূর্যের আলো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি হয় বলে কোনো দূষণ হয় না। দ্বিতীয়ত, একবার বসালে এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুবই কম। আর সূর্যের আলো তো অফুরন্ত, তাই বিদ্যুতের জন্য অন্য উৎসের ওপর নির্ভরতাও কমে যায়।
তবে হ্যাঁ, সোলার প্যানেলের কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন, দিনের বেলায় যখন রোদ থাকে তখনই এটা সবচেয়ে ভালো কাজ করে। মেঘলা দিনে বা রাতে এর উৎপাদন কমে বা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও, শুরুতে এটা বসানোর খরচ একটু বেশি হতে পারে।
কিন্তু সব মিলিয়ে দেখলে, সোলার প্যানেল আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটা দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। পরিবেশ রক্ষা থেকে শুরু করে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ – সব দিকেই এর গুরুত্ব বাড়ছে।
আশা করি, সোলার প্যানেল কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। কোনো প্রশ্ন থাকলে, কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।