ভালো টিভি চেনার উপায় কি? আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিন সেরা টিভি!

জেনেনিন টিভি কেনার সঠিক উপায়, ভালো টিভি চেনার একটি বিস্তারিত গাইড

আপনি কি একটি নতুন টিভি কেনার কথা ভাবছেন, কিন্তু বাজারে এত ধরনের টিভি দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন? প্রযুক্তির এই যুগে বাজারে এত রকমের টিভি এসেছে যে কোনটা রেখে কোনটা কিনবেন, তা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। স্মার্ট টিভি, 4K, OLED, QLED – এই সব শব্দ শুনে আপনার মাথা হয়তো ঘুরে যাচ্ছে! কিন্তু চিন্তা নেই, আজকে আমরা দেখব প্রয়োজন অনুযায়ী বাজারের সেরা টিভিটি বেছে নেওয়ার উপায়গুলো সম্পর্কে।

একটি টিভি কেনার আগে কয়েকটি বিষয় ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। চলুন, ধাপে ধাপে সেগুলো জেনে নিই।

আপনার প্রয়োজন বুঝুন

আপনার প্রয়োজন বুঝুন
প্রথমেই ভাবুন, আপনি টিভিতে ঠিক কোন কাজগুলো করবেন! | Photo by Samuel Regan-Asante on Unsplash

টিভি কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিজেকে করা উচিত, যাতে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক টিভিটি বেছে নিতে পারেন। প্রথমেই ভাবুন, আপনি কি শুধু সিনেমা বা সিরিজ দেখার জন্য টিভি ব্যবহার করবেন, নাকি গেমিংয়ের জন্যও ব্যবহৃত হবে? এরপর বিবেচনা করুন আপনার ঘরের আকার – ঘরটি বড় না ছোট, তার ওপর নির্ভর করবে আপনি কত ইঞ্চির টিভি কিনবেন। বাজেটও একটি বড় বিষয়, কারণ বিভিন্ন ফিচার ও প্রযুক্তির টিভির দাম ভিন্ন হতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, আপনি কি কেবল টিভি সংযোগ ব্যবহার করবেন, নাকি ইন্টারনেটভিত্তিক কন্টেন্ট যেমন Netflix, YouTube ইত্যাদি বেশি দেখেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা থাকলে আপনার জন্য উপযুক্ত টিভি বেছে নেওয়া অনেক সহজ হবে।

স্ক্রিন সাইজ

স্ক্রিন সাইজ
বড় স্ক্রিন সাইজ মানেই যে ভালো টিভি তা কিন্তু নয়! | Photo by Marques Kaspbrak on Unsplash

অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, টিভির সাইজ যত বড় হবে, টিভি দেখার অভিজ্ঞতাও তত ভালো হবে। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি এমন নয়। টিভির আকার নির্ধারণ করার সময় শুধু বড় হওয়ার দিকটা দেখলেই হবে না – বিবেচনায় নিতে হবে আপনার ঘরের আকার এবং আপনি কত দূর থেকে টিভি দেখছেন। কারণ, যদি টিভির সাইজ ঘরের তুলনায় বেশি বড় হয়ে যায়, তাহলে সেটি চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে এবং দেখার অভিজ্ঞতাও আরামদায়ক না-ও হতে পারে।

একটি সহজ নিয়ম অনুসরণ করলেই আপনি বুঝে নিতে পারবেন আপনার ঘরের জন্য কোন সাইজের টিভি উপযুক্ত হবে। সাধারণত টিভির স্ক্রিন সাইজ (ইঞ্চি) দিয়ে ১.৫ বা ২ গুণ করলেই আপনি আদর্শ দেখার দূরত্ব (ফুটে) পেয়ে যাবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার টিভির স্ক্রিন ৫০ ইঞ্চি হয়, তাহলে আপনাকে টিভি থেকে প্রায় ৭.৫ থেকে ১০ ফুট দূরে বসে দেখা উচিত। এই দূরত্ব থেকে আপনি ছবির প্রতিটি ডিটেইল পরিষ্কারভাবে দেখতে পারবেন এবং চোখের ওপরও চাপ পড়বে না।

আরও দেখুনঃ ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় কি? সেরা ফ্রিজটি বেছে নিন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী!

ডিসপ্লে টেকনোলজি – OLED, QLED না LED?

ডিসপ্লে টেকনোলজি
OLED, QLED ও LED এর মধ্যে যেকোনো একটি প্রযুক্তি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পছন্দ করুন | Photo by Jan Böttinger on Unsplash
এটি টিভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে বাজারে তিনটি প্রধান ডিসপ্লে টেকনোলজি পাওয়া যায়ঃ
  • LED/LCD টিভিঃ এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তির। এই টিভিগুলো সাধারণত বেশ উজ্জ্বল হয় এবং সব ধরনের ব্যবহারের জন্য ভালো। যদি আপনার বাজেট কম থাকে বা আপনি সাধারণ ব্যবহারের জন্য একটি ভালো টিভি চান, তাহলে LED/LCD আপনার জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে।
  • OLED টিভিঃ যারা সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য OLED সেরা পছন্দ। OLED প্যানেলের প্রতিটি পিক্সেল নিজে থেকে আলো তৈরি করতে পারে, যার ফলে এটি নিখুঁত কালো রঙ এবং দুর্দান্ত কনট্রাস্ট তৈরি করে। এর ফলে ছবির গভীরতা এবং রঙের প্রাণবন্ততা হয় অসাধারণ। তবে এটি LED-এর চেয়ে অনেক বেশি দামি।
  • QLED টিভিঃ এটি স্যামসাংয়ের মতো কিছু ব্র্যান্ডের একটি বিশেষ প্রযুক্তি। QLED টিভিগুলো LED-এর চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং রঙের বিস্তৃত পরিসর দেখাতে পারে। যদি আপনার টিভি এমন ঘরে থাকে যেখানে প্রচুর আলো আসে, তাহলে QLED-এর উজ্জ্বল ডিসপ্লে আপনাকে ভালো ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স দেবে।

রেজোলিউশন

রেজোলিউশন
বর্তমানে একটি 4K টিভি কেনা বুদ্ধিমানের কাজ তবে আপনার বাজেট এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পছন্দ করুন | Photo by Lisa from Pexels

রেজোলিউশন মানে হলো টিভির পর্দায় মোট কতগুলো পিক্সেল রয়েছে। পিক্সেলের সংখ্যা যত বেশি হবে, ছবি তত বেশি শার্প ও বিস্তারিতভাবে দেখা যাবে। বর্তমানে টিভির রেজোলিউশনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। Full HD (1080p) এখনো ছোট আকারের টিভির জন্য ভালো একটি অপশন। তবে আধুনিক মানের ছবি উপভোগ করতে চাইলে 4K Ultra HD হচ্ছে সবচেয়ে আদর্শ রেজোলিউশন। 

4K-তে Full HD-এর তুলনায় চারগুণ বেশি পিক্সেল থাকে, যার ফলে ছবির গুণগত মান অনেক উন্নত হয়। এখনকার বেশিরভাগ সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ 4K-তে তৈরি হচ্ছে, তাই একটি 4K টিভি কেনা বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও বাজারে এখন 8K টিভিও পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু 8K কনটেন্ট এখনো খুব বেশি সহজলভ্য নয়। তাই সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য 8K টিভি কেনার তেমন প্রয়োজন নেই বললেই চলে এছাড়া এর দাম ও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।

আরও দেখুনঃ কি কি দেখে মোবাইল কিনতে হয়? জেনেনিন কিছু টিপস!

রিফ্রেশ রেট

রিফ্রেশ রেট
টিভিতে গেম খেলতে চাইলে হাই-রিফ্রেশ রেট বিশিষ্ট টিভি বেশি উপযোগী হবে | Image by Victoria from Pixabay

রিফ্রেশ রেট হলো একটি টিভি স্ক্রিন প্রতি সেকেন্ডে কতবার ছবি রিফ্রেশ বা আপডেট করে, এবং এটি Hertz (Hz) ইউনিটে পরিমাপ করা হয়। বেশিরভাগ সাধারণ টিভির রিফ্রেশ রেট 60Hz হয়ে থাকে, যা সাধারণ সিনেমা দেখা বা টেলিভিশন প্রোগ্রাম উপভোগ করার জন্য যথেষ্ট। তবে যারা গেম খেলতে ভালোবাসেন বা খেলাধুলা দেখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য 120Hz রিফ্রেশ রেটবিশিষ্ট টিভি বেশি উপযোগী। কারণ এটি দ্রুতগতির দৃশ্যে মোশনকে আরও মসৃণভাবে উপস্থাপন করে এবং ছবির ব্লার বা ঝাপসাভাব কমিয়ে দেয়, ফলে দর্শনীয় অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হয়।

স্মার্ট টিভি ফিচার

স্মার্ট টিভি ফিচার
স্মার্ট টিভি কিনলে তার অপারেটিং সিস্টেম এবং সাপোর্টেড অ্যাপ সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিন | Photo by Oscar Nord on Unsplash

স্মার্ট টিভি সাধারণ টিভির থেকে ভিন্ন কারণ এতে ইন্টারনেট কানেক্ট করার সুবিধা থাকে এবং এর সাথে বিল্ট-ইন বিভিন্ন অ্যাপ থাকে, যেমন Netflix, YouTube, Amazon Prime Video ইত্যাদি। এর ফলে, আপনি সরাসরি টিভি থেকে আপনার পছন্দের সিরিজ, সিনেমা, ভিডিও এবং লাইভ স্ট্রিমিং সহজেই দেখতে পারেন, অতিরিক্ত কোন ডিভাইসের ছাড়াই। বর্তমানে বাজারে প্রায় সব টিভিই স্মার্ট টিভি হিসেবে পাওয়া যায়, তাই টিভি কেনার সময় শুধু স্ক্রিন সাইজ বা রেজুলেশনের চেয়ে তার সফটওয়্যার এবং ইউজার ইন্টারফেসের দিকটাও খেয়াল রাখা জরুরি। 

বিশেষ করে দেখতে হবে টিভির মধ্যে আপনার পছন্দের অ্যাপগুলো সমর্থিত আছে কিনা এবং এসব অ্যাপ চালানো কতটা সহজ ও সুবিধাজনক। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভিতে তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম থাকে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে। যেমন, অনেক টিভিতে অ্যান্ড্রয়েড টিভি অপারেটিং সিস্টেম থাকে, আবার অন্য কিছুতে WebOS বা Tizen এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহৃত হয়। এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো টিভির পারফরমেন্স, অ্যাপসের বৈচিত্র্য এবং ইন্টারফেসের ব্যবহারকারীর সহজতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই স্মার্ট টিভি কেনার সময় এগুলো বিবেচনা করে সঠিক পছন্দ করা গুরুত্বপূর্ণ।

কানেক্টিভিটি ও পোর্টস

কানেক্টিভিটি ও পোর্টস
টেলিভিশন বেছে নেওয়ার সময় দেখেনিন কানেক্টিভিটির জন্য পর্যাপ্ত পোর্টস রয়েছে কিনা | Photo by TheRegisti on Unsplash

একটি ভালো টেলিভিশন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক পোর্ট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। HDMI পোর্ট বিশেষ করে অত্যাবশ্যক, কারণ এর মাধ্যমে আপনি গেম কনসোল, সাউন্ডবার, ব্লু-রে প্লেয়ার এবং অন্যান্য আধুনিক ডিভাইস সহজেই সংযুক্ত করতে পারবেন। তাই, একটি টিভিতে সাধারণত ২ থেকে ৪টি HDMI পোর্ট থাকা উত্তম, যা আপনাকে একসাথে একাধিক ডিভাইস ব্যবহার করার সুবিধা দেবে। 

এছাড়াও, পেনড্রাইভ বা এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ থেকে সরাসরি ভিডিও, ছবি বা অন্যান্য কোনো কন্টেন্ট দেখতে চাইলে USB পোর্ট থাকা আবশ্যক। এই পোর্টের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার প্রিয় ফাইলগুলো টিভিতে প্লে করতে পারবেন, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। তাই, একটি টিভি কেনার সময় পোর্টের সংখ্যা এবং ধরন ভালোভাবে যাচাই করা উচিত, যাতে এটি আপনার সব ধরনের ডিভাইসের সাথে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

সাউন্ড কোয়ালিটি

সাউন্ডবার
ভালো সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য সাউন্ডবার অথবা হোম থিয়েটার সিস্টেম ব্যাবহার করতে পারেন | Photo by Mark Chan on Unsplash

আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে টেলিভিশনগুলো পাতলা এবং ঝকঝকে ডিজাইনে তৈরি হচ্ছে। টিভির এই স্লিম গড়ন দেখতে দারুণ লাগলেও এর একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, এতে স্পিকারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। তাই টিভির বিল্ট-ইন স্পিকারগুলো সাধারণত আকারে ছোট এবং সীমিত ক্ষমতার হয়। এর ফলস্বরূপ, আপনি যখন কোনো সিনেমা বা পছন্দের অনুষ্ঠান দেখেন, তখন টিভির সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক সময়ই আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।

তাই, আপনি যদি আপনার টিভির চমৎকার ছবির মানের সাথে মানানসই একটি শক্তিশালী অডিও অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাহলে টিভির বিল্ট-ইন স্পিকারের উপর নির্ভর না করে একটি বাহ্যিক সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনার জন্য দুটি চমৎকার বিকল্প রয়েছে।

প্রথমত, একটি সাউন্ডবার – এটি একটি সহজ এবং কার্যকরী সমাধান। একটি সাউন্ডবার টিভির সাউন্ডকে নাটকীয়ভাবে উন্নত করতে পারে এবং ডায়লগকে অনেক বেশি স্পষ্ট করে তোলে, যা সাধারণ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট। 

এছারা, যারা একটি সত্যিকারের সিনেমা হলের মতো অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য একটি হোম থিয়েটার সিস্টেম সেরা পছন্দ হবে। এই সিস্টেমটি মাল্টি-চ্যানেল অডিওর মাধ্যমে চারপাশে শব্দ ছড়িয়ে দেয়, যা আপনাকে ছবির প্রতিটি অ্যাকশনের কেন্দ্রে নিয়ে আসে এবং আপনার বিনোদনের অভিজ্ঞতাকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দেয়।

সবশেষে, সেরা টিভিটি আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন, বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী হবে। যদি আপনি সিনেমার অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেন, তাহলে বাজেট বাড়িয়ে একটি OLED টিভিতে ইনভেস্ট করতে পারেন। যদি আপনার বাজেট কম থাকে এবং আপনি সাধারণ ব্যবহারের জন্য ভালো কিছু চান, তাহলে একটি 4K LED টিভি আপনার জন্য আদর্শ।

আশা করি, এই গাইড আপনাকে সঠিক টিভিটি বেছে নিতে সাহায্য করবে। এছারা এই বিষয় আপনার যদি কোন মতামত থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Most Voted
Newest Oldest
Inline Feedbacks
View all comments