ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় কি? সেরা ফ্রিজটি বেছে নিন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী!

জেনেনিন ফ্রিজ কেনার সঠিক উপায়, ভালো ফ্রিজ চেনার একটি বিস্তারিত গাইড

ফ্রিজ বর্তমান সময়ে প্রতিটি আধুনিক রান্নাঘরের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু খাবার সংরক্ষণই করে না, বরং আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তোলে। কিন্তু বাজারে এতো রকমের ফ্রিজ, এতো ফিচারস এবং এতো ব্র্যান্ডের ভিড়ে ‘ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়’ খুঁজে বের করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আপনি যদি নতুন ফ্রিজ কেনার কথা ভাবছেন অথবা আপনার পুরনো ফ্রিজটি পরিবর্তন করতে চাইছেন, তাহলে এই বিস্তৃত গাইডটি আপনার জন্য। এখানে আমরা ভালো ফ্রিজ চেনার সকল খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আপনি আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী সেরা ফ্রিজটি বেছে নিতে পারেন।

আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট নির্ধারণ করুন

টাকা
সর্বপ্রথম বাজেট নির্ধারণ করুন | Photo by Alexander Mils on Unsplash

যেকোনো জিনিস কেনার আগে আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট নির্ধারণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আর ফ্রিজের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ফ্রিজ কেনার আগে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনা করা উচিত। যেমন, ১-২ জনের পরিবারের জন্য ১৫০-২০০ লিটারের ছোট ফ্রিজ, ২-৪ জনের জন্য ২০০-৩০০ লিটারের মাঝারি ফ্রিজ, ৪-৬ জনের জন্য ৩০০-৪০০ লিটারের বড় ফ্রিজ এবং ৬ জনের বেশি সদস্যের জন্য ৪০০ লিটার বা তার বেশি ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বড় ফ্রিজ বা সাইড-বাই-সাইড ফ্রিজ উপযুক্ত। 

এছাড়াও, আপনি কতটা খাবার সংরক্ষণ করেন তার উপর ধারণক্ষমতা নির্ভর করবে; যদি প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল বা রান্না করা খাবার সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে বড় ধারণক্ষমতার ফ্রিজ প্রয়োজন হবে। রান্নাঘরে ফ্রিজ রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কিনা, সেটাও পরিমাপ করে নেওয়া জরুরি, কারণ এটি ফ্রিজের আকার ও প্রকারভেদে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবশেষে, একটি আনুমানিক বাজেট থাকা উচিত, কারণ ফ্রিজের মডেল এবং ফিচার অনুযায়ী দামের পার্থক্য থাকবে।

আরও দেখুনঃ কি কি দেখে মোবাইল কিনতে হয়? জেনেনিন কিছু টিপস!

ফ্রিজের প্রকারভেদ

ফ্রিজের প্রকারভেদ
ফ্রিজ কেনার আগে ফ্রিজের বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে জানুন

ভালো ফ্রিজ কেনার আগে এর বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে জানা জরুরি, কারণ প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। 

সিঙ্গেল ডোর ফ্রিজ হলো সবচেয়ে কম দামি এবং কম বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বিকল্প, যা ছোট পরিবার বা ব্যাচেলরদের জন্য আদর্শ। এতে একটি মাত্র দরজার পেছনে ফ্রিজার ও রেফ্রিজারেটর কম্পার্টমেন্ট একসাথে থাকে, তবে ফ্রিজার অংশ ছোট হওয়ায় মাঝে মাঝে বরফ জমার সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা ডিফ্রস্ট করার প্রয়োজন হয়।

অন্যদিকে, ডাবল ডোর ফ্রিজ মাঝারি থেকে বড় পরিবারের জন্য উপযুক্ত। এতে ফ্রিজার এবং রেফ্রিজারেটরের জন্য দুটি আলাদা দরজা থাকে এবং সাধারণত নো-ফ্রস্ট টেকনোলজি থাকায় বরফ জমে না। এটি সিঙ্গেল ডোরের চেয়ে কিছুটা বেশি দামি এবং বিদ্যুৎ খরচও বেশি। ডাবল ডোর ফ্রিজের মধ্যে বটম ফ্রিজার ফ্রিজ একটি জনপ্রিয় ধরন, যেখানে ফ্রিজার অংশ নিচে থাকে এবং রেফ্রিজারেটর অংশ উপরে থাকে। এর সুবিধা হলো দৈনন্দিন ব্যবহৃত খাবার চোখের সামনে ও হাতের নাগালে থাকে, ফলে ব্যবহার করা সহজ এবং কোমর বাঁকাতে হয় না; তবে এটি টপ ফ্রিজারের চেয়ে দামি।

যারা বিশাল ধারণক্ষমতা এবং আধুনিক ডিজাইন পছন্দ করেন, তাদের জন্য সাইড-বাই-সাইড ফ্রিজ উপযুক্ত। এতে দুটি উল্লম্ব দরজা থাকে এবং প্রায়শই ওয়াটার ডিসপেন্সার ও আইস মেকার সুবিধা থাকে। যদিও এটি অনেক বড় জায়গা নেয়, দামি এবং বিদ্যুৎ খরচও বেশি, এটি বড় পরিবার এবং প্রচুর খাবার সংরক্ষণের প্রয়োজন এমন পরিবারের জন্য আদর্শ। ফ্রান্স ডোর ফ্রিজ আরেকটি স্টাইলিশ বিকল্প, যেখানে উপরে দুটি ছোট দরজা থাকে রেফ্রিজারেটরের জন্য এবং নিচে একটি ড্রয়ার টাইপের ফ্রিজার থাকে। এটি সাইড-বাই-সাইড ফ্রিজের মতোই দামি ও বড় আকারের হয়, তবে স্টাইলিশ ডিজাইন এবং ভালো স্পেস অর্গানাইজেশনের জন্য আধুনিক রান্নাঘরের সাথে মানানসই।

সবশেষে, মিনি ফ্রিজ বা কম্প্যাক্ট ফ্রিজ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বা ছোট রুমের জন্য উপযুক্ত। এটি পোর্টেবল, কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং কম জায়গা নেয়, তবে এর ধারণক্ষমতা অত্যন্ত কম। হোস্টেল, অফিস বা ব্যক্তিগত কক্ষের জন্য এটি একটি কার্যকরী সমাধান।

আরও দেখুনঃ অফলাইন ইউপিএস এবং অনলাইন ইউপিএস এর মধ্যে পার্থক্য

ধারণক্ষমতা এবং অভ্যন্তরীণ বিন্যাস (Capacity and Internal Layout)

ধারণক্ষমতা এবং অভ্যন্তরীণ বিন্যাস
ফ্রিজ কেনার আগে ধারণক্ষমতা এবং অভ্যন্তরীণ বিন্যাস দেখে কিনুন

ফ্রিজের ধারণক্ষমতা সাধারণত লিটারে পরিমাপ করা হয় এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী সঠিক ধারণক্ষমতার ফ্রিজ নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। যদিও পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ধারণক্ষমতার একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে, তবে যদি আপনার ঘন ঘন অতিথি আপ্যায়ন করার অভ্যাস থাকে বা সপ্তাহে একবার বাজার করেন, তাহলে কিছুটা বেশি ধারণক্ষমতার ফ্রিজ কেনা উচিত। ফ্রিজ কেনার সময় এর অভ্যন্তরীণ বিন্যাস ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। 

লক্ষ্য রাখবেন ফ্রিজে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ তাক (Adjustable Shelves) থাকে, যা প্রয়োজন অনুযায়ী উপরে-নিচে সরানো যায়; এতে বড় পাত্র বা বোতল রাখতে সুবিধা হবে। এছাড়াও, ডিম, ছোট জার ইত্যাদি রাখার জন্য পর্যাপ্ত ডোর পকেট (Door Pockets) আছে কিনা তা দেখে নেওয়া দরকার। শাকসবজি ও ফলমূল সতেজ রাখার জন্য আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণকারী ভেজিটেবল ক্রিসপার (Vegetable Crisper) ড্রয়ার থাকা আবশ্যক। সবশেষে, ফ্রিজারের ভেতরেও পর্যাপ্ত এবং সুসংগঠিত ফ্রিজার ড্রয়ার/সেলফ (Freezer Drawers/Shelves) থাকা জরুরি।

আরও দেখুনঃ কোন ধরণের সোলার সিস্টেম ভালো? জেনেনিন সোলার সম্পর্কে! 

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ (Energy-efficient refrigerator)

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ স্টার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়

বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ কেনা এখন বুদ্ধিমানের কাজ। ফ্রিজের স্টার রেটিং দেখে আপনি এর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। বাংলাদেশে বিএসটিআই (BSTI) এবং অন্যান্য দেশে ব্যুরো অফ এনার্জি এফিশিয়েন্সি (BEE) এই রেটিং দিয়ে থাকে। যে ফ্রিজে যত বেশি স্টার থাকবে সে ফ্রিজ তত বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে, যেমন বর্তমানে ৫-স্টার ফ্রিজ সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়।

ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইনভার্টার টেকনোলজি (Inverter Technology) যুক্ত ফ্রিজ। ইনভার্টার কম্প্রেসার প্রধানত প্রচলিত কম্প্রেসারের মতো বারবার চালু বা বন্ধ হয় না এটি তাপমাত্রার প্রয়োজন অনুযায়ী তার গতি নিয়ন্ত্রণ করে। এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো: কম বিদ্যুৎ খরচ, কম শব্দ, কম্প্রেসারের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি এবং তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখা।

যদিও নন-ইনভার্টার ফ্রিজের চেয়ে এর দাম কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনার বিদ্যুতের বিল কমিয়ে খরচ পুষিয়ে দেবে। সাধারণ কম্প্রেসার একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছানোর পর সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আবার পুরো ক্ষমতায় চালু হয়, যা বিদ্যুতের অপচয় ঘটায়। অন্যদিকে, ইনভার্টার কম্প্রেসার তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সর্বনিম্ন শক্তি ব্যবহার করে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে, ফলে বিদ্যুতের অপচয় অনেক কমে যায়।

ফ্রিজারের বৈশিষ্ট্য

ফ্রিজারের বৈশিষ্ট্য
ফ্রিজারের বৈশিষ্ট্য দেখে ফ্রিজ কিনুন
নো-ফ্রস্ট টেকনোলজি (No-Frost Technology)

এই ফিচারটি আপনার ফ্রিজারের ভেতরে বরফ জমতে দেয় না, কারণ এটি বাতাসকে সুষমভাবে প্রবাহিত করে এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতা বের করে দেয়। এর প্রধান সুবিধা হলো আপনাকে বরফ পরিষ্কার করার ঝামেলা পোহাতে হবে না, খাবার একসাথে জমে যাবে না এবং এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, কারণ বরফ জমে থাকলে ফ্রিজারের বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়। তবে, এর কিছু অসুবিধাও আছে; এটি ডিরেক্ট কুলিং ফ্রিজের চেয়ে বেশি দামি, এবং মাঝে মাঝে খাবার শুকিয়ে যেতে পারে যদি সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ না করা হয়। যারা ঝামেলাবিহীন ব্যবহার এবং ভালো খাবার সংরক্ষণ চান, তাদের জন্য এই ফিচারটি আদর্শ।

ডিরেক্ট কুলিং (Direct Cooling)

এই ফ্রিজারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর ভেতরের কয়েল সরাসরি বরফ জমায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি কম দামি, যা সীমিত বাজেটধারীদের জন্য উপযুক্ত। তবে এর কিছু অসুবিধাও আছে। যেহেতু এটি সরাসরি বরফ জমায়, তাই নিয়মিত ডিফ্রস্ট করা জরুরি, অন্যথায় প্রচুর বরফ জমে ফ্রিজারের ভেতরের জায়গা কমিয়ে দেয় এবং বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়ে দেয়। ছোট পরিবার যাদের বাজেট সীমিত, তাদের জন্য এই ধরনের ফ্রিজার কেনা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

টেকসইতা এবং বিল্ড কোয়ালিটি

টেকসইতা এবং বিল্ড কোয়ালিটি
টেকসইতা ও বিল্ড কোয়ালিটি যাচাই করে ফ্রিজ কিনুন

একটি ভালো ফ্রিজ সাধারণত ১৫-২০ বছর পর্যন্ত টেকে, তাই এর টেকসইতা ও বিল্ড কোয়ালিটি যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিজের সবচেয়ে জরুরি অংশ হলো কম্প্রেসার, এবং নামকরা ব্র্যান্ডগুলো কম্প্রেসারের উপর ১০-২০ বছরের ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে, যা পণ্যের গুণগত মানের একটি বড় নির্দেশক। ফ্রিজের মেটেরিয়াল কোয়ালিটি পরীক্ষা করাও আবশ্যক।

বাইরের বডির জন্য স্টেইনলেস স্টিল বা টেকসই প্লাস্টিক বেছে নেওয়া উচিত, এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেজিস্ট্যান্ট মেটেরিয়াল হলে সুবিধা হয়। ভেতরের শেল্ফগুলো টেম্পার্ড গ্লাস বা স্পিল-প্রুফ হলে তা টেকসই হয় এবং পরিষ্কার করা সহজ। এছাড়া, ডোর গ্যাসকেট বা দরজার রাবার যেন শক্ত ও টাইট হয়, যাতে ঠান্ডা বাতাস বাইরে না যেতে পারে।

অতিরিক্ত ফিচারস

অতিরিক্ত ফিচারস
অতিরিক্ত ফিচারসগুলো আপনার দরকার কিনা তা বিবেচনা করুন

বর্তমানে আধুনিক ফ্রিজগুলো কেবল খাবার সংরক্ষণের যন্ত্র নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুবিধাজনক করতে এতে যুক্ত হয়েছে নানা অত্যাধুনিক ফিচার। এর মধ্যে স্মার্ট ফ্রিজ অন্যতম, যা Wi-Fi কানেক্টিভিটি, টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, ভেতরের ক্যামেরা, রেসিপি অ্যাপ এবং স্মার্টফোন থেকে নিয়ন্ত্রণ-এর মতো সুবিধা প্রদান করে। যদিও এর দাম বেশি, তবুও যারা আধুনিক জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ।

অনেক ফ্রিজে এখন ওয়াটার ডিসপেন্সার এবং আইস মেকার দেখা যায়, যা ফ্রিজের দরজা না খুলেই ঠান্ডা পানি এবং বরফ সরবরাহ করে, ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। তবে এই ফিচারযুক্ত ফ্রিজগুলো তুলনামূলকভাবে দামি হয় এবং কিছু মডেলের জন্য পানির লাইন প্রয়োজন হয়। ডোর কুলিং/মাল্টি-এয়ার ফ্লো প্রযুক্তি ফ্রিজের প্রতিটি কোণায়, বিশেষ করে দরজার অংশে, সমানভাবে ঠান্ডা বাতাস পৌঁছে দেয়, যা খাবারের সতেজতা দীর্ঘস্থায়ী করে।

শাকসবজি ও ফলমূল বেশি দিন সতেজ রাখতে আধুনিক ফ্রিজে থাকে ভেজিটেবল ক্রিসপার উইথ হিউমিডিটি কন্ট্রোল, যেখানে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া, ডিজিটাল টেম্পারেচার কন্ট্রোল প্যানেল নিখুঁতভাবে ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা ব্যবহার করা সহজ। কিছু ফ্রিজে ডাবল ডোর ইন ডোর ফিচার থাকে, যেখানে মূল দরজার ভেতরে আরেকটি ছোট দরজা থাকে ঘন ঘন ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখার জন্য। এটি মূল দরজা খোলার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে ঠান্ডা বাতাস বের হওয়া রোধ করে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়েও সহায়ক। এই সকল উদ্ভাবনী ফিচার আপনার ফ্রিজের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে তোলে।

ব্র্যান্ড এবং বিক্রয়োত্তর সেবা (Brand and After-Sales Service)

ব্র্যান্ড এবং বিক্রয়োত্তর সেবা
ব্র্যান্ড এবং বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে জেনে নিন | Photo by SEO Galaxy on Unsplash

ভালো ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের সুনাম এবং তাদের বিক্রয়োত্তর সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Samsung, LG, Hitachi, Panasonic, Toshiba, Sharp, Walton, Minister, Singer, Vision ইত্যাদি ব্র্যান্ডগুলো ফ্রিজের জন্য সুপরিচিত এবং এদের পণ্যের গুণগত মান ও প্রযুক্তির উপর ভরসা করা যায়। ফ্রিজ কেনার আগে কম্প্রেসার এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া উচিত।

এছাড়া, বিক্রয়োত্তর সেবা কেমন, অর্থাৎ সার্ভিস সেন্টারগুলোর সহজলভ্যতা এবং তাদের সেবার মান সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত সাপোর্ট পাওয়া যাবে কিনা, তা যাচাই করে নিতে পারেন। সবশেষে, অনলাইনে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের রিভিউ এবং রেটিং দেখে নিলে ফ্রিজ সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাওয়া সম্ভব।

ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ টিপস

ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ
সঠিক ইনস্টলেশন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ফ্রিজের কার্যকারিতা ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

ফ্রিজের সঠিক ইনস্টলেশন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এর কার্যকারিতা ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক। ইনস্টলেশনের সময় ফ্রিজ দেয়াল থেকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি দূরে রাখুন যাতে বায়ু চলাচল ভালোভাবে হয়। এটি সরাসরি সূর্যের আলো বা ওভেনের মতো তাপ উৎপন্নকারী যন্ত্রের পাশে রাখা থেকে বিরত থাকুন এবং সমতল পৃষ্ঠে স্থাপন করুন। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে ফ্রিজের ভেতরের অংশ পরিষ্কার রাখুন, বিশেষ করে খাবারের দাগ বা গন্ধ দূর করতে।

ডিরেক্ট কুলিং ফ্রিজের ক্ষেত্রে বরফ জমে গেলে নিয়মিত ডিফ্রস্ট করুন। দরজার রাবার গ্যাসকেটগুলো সময় সময় পরীক্ষা করুন এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হলে পরিবর্তন করুন, কারণ এটি ঠান্ডা বাতাস ধরে রাখতে সাহায্য করে। আবহাওয়া এবং খাবারের পরিমাণ অনুযায়ী তাপমাত্রা সেট করুন। ফ্রিজে অতিরিক্ত খাবার দিয়ে ওভারলোড করবেন না, কারণ এতে ঠান্ডা বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং ফ্রিজের কার্যক্ষমতা কমে যায়।

পরিশেষে উল্লেখ্য

আশা করি, “ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় কি” এই বিস্তারিত গাইডটি আপনাকে আপনার জন্য সেরা ফ্রিজটি বেছে নিতে সাহায্য করবে। সঠিক তথ্য এবং পরিকল্পনা নিয়ে কেনাকাটা করলে আপনি নিশ্চিতভাবে একটি ভালো মানের ফ্রিজ খুঁজে পাবেন যা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরও আরামদায়ক করে তুলবে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা ফ্রিজটি বেছে নিন এবং নিশ্চিন্তে খাবার সংরক্ষণ করুন!

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Most Voted
Newest Oldest
Inline Feedbacks
View all comments