বিগত কয়েকদিন ধরে “বিটচ্যাট” নিয়ে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই অ্যাপটি টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি তৈরি করেছেন এবং এটি ইন্টারনেট ছাড়াই কাজ করে বলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এই বিটচ্যাট আসলে কি? কিভাবে কাজ করে?
বিটচ্যাট আসলে একটি ব্লুটুথভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ, যা “মেস নেটওয়ার্কিং” প্রযুক্তি ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। এর ফলে ব্যবহারকারীদের বার্তাগুলো সরাসরি একটি ডিভাইস থেকে অন্যটিতে “হপ” করে চলে যায়, কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভারের মধ্য দিয়ে যায় না। এই ফিচারটি মূলত হোয়াটসঅ্যাপের মতো অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপ থেকে এটিকে আলাদা করে।
বিটচ্যাট-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো গোপনীয়তা, নিরাপত্তা এবং বিকেন্দ্রীভূত কাঠামো। এই অ্যাপে কোনো ফোন নম্বর, ই-মেইল বা ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয় না। সব বার্তা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড থাকে এবং ব্যবহারকারীর ফোনেই সংরক্ষিত হয়। বর্তমানে অ্যাপটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি কেবল আইওএস ব্যবহারকারীদের জন্য সীমিত আকারে ছাড়া হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণও খুব শীঘ্রই আসবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও দেখুনঃ আপনার পাসওয়ার্ড কি হ্যাকারদের হাতে চলেগেছে? জেনেনিন এই টুলগুলো দিয়ে!
কীভাবে কাজ করে ইন্টারনেট ছাড়া?

বিটচ্যাট কোনো সেন্ট্রাল সার্ভার ব্যবহার করে না। এর বদলে এটি ব্লুটুথ মেস নেটওয়ার্ক (Bluetooth Mesh Network) প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর ফলে, কাছাকাছি থাকা ডিভাইসগুলো সরাসরি একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয় এবং একটি স্থানীয় নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি কনসার্টে বা ভিড়ের মধ্যে আছেন, যেখানে মোবাইল ডেটা বা ওয়াইফাই কাজ করছে না। আপনার বন্ধু যদি আপনার আশেপাশে থাকে এবং তাদের ফোনেও বিটচ্যাট ইনস্টল করা থাকে, তাহলে আপনার পাঠানো মেসেজটি সরাসরি ব্লুটুথের মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে যাবে। এমনকি, যদি আপনার বন্ধু কিছুটা দূরেও থাকে (৩০০ মিটার পর্যন্ত), মেসেজটি আপনার পাশের অন্য কোনো বিটচ্যাট ব্যবহারকারীর ফোনের মাধ্যমে “হপ” করে তার কাছে পৌঁছে যাবে। অনেকটা টরেন্টের মতো, যেখানে তথ্য এক পিয়ার থেকে অন্য পিয়ারে যায়।
গোপনীয়তা

হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিটচ্যাটও এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে, যা নিশ্চিত করে যে প্রেরক এবং প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ মেসেজ পড়তে পারবে না। তবে বিটচ্যাটের গোপনীয়তা আরও এক ধাপ এগিয়ে। যেমন –
- বিটচ্যাটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে কোনো ফোন নম্বর, ই-মেইল বা ব্যক্তিগত তথ্যের প্রয়োজন হয় না। এটি ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণ বেনামী থাকার সুবিধা দেয়।
- মেসেজগুলো কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হয় না, বরং শুধুমাত্র ব্যবহারকারীর ফোনেই সংরক্ষিত থাকে এবং এক নির্দিষ্ট সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। এর ফলে, হ্যাক হওয়ার বা ডেটা ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি প্রায় থাকেই না।
- যেহেতু অ্যাপটি কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তাই কোনো সরকার বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই এটি বন্ধ করতে পারবে না।
হোয়াটসঅ্যাপ বনাম বিটচ্যাট

বিটচ্যাট তার কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তার জন্য ব্যাবহারকারীদের কাছে একটি ভালো অপশন হতে পারে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের বিশাল ব্যবহারকারী সংখ্যা, সহজ ইন্টারফেস এবং নানা ধরনের ফিচার (যেমনঃ গ্রুপ ভিডিও কল, স্ট্যাটাস, পেমেন্ট) এটিকে এখনও অনেক এগিয়ে রেখেছে। এছাড়া, বিটচ্যাট যেহেতু একটি ব্লুটুথভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ, যা “মেস নেটওয়ার্কিং” প্রযুক্তি ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তাই এটি থেকে অনেক দূরে যোগাযোগ (পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত) করা হয়তো সম্ভব হবে না।
বর্তমানে বিটচ্যাট পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর ব্যবহারকারী সংখ্যাও সীমিত। এটি আইওএস ডিভাইসের জন্য ছাড়া হয়েছে, তবে শিগগিরই অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণও আসবে।
বিটচ্যাট হয়তো এখনই হোয়াটসঅ্যাপের জায়গা নিতে পারবে না, কিন্তু এটি হয়তো যোগাযোগের জগতে একটি নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ অপশন হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রচলিত পদ্ধতির বাইরেও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ও কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব। যারা ইন্টারনেট সংযোগবিহীন স্থানে থাকেন বা যারা তাদের অনলাইন গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাদের জন্য বিটচ্যাট একটি দারুণ বিকল্প হতে পারে। ভবিষ্যতে এই অ্যাপটি কতটা জনপ্রিয়তা পায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।