টেসলা কয়েল কি? টেসলা কয়েল কিভাবে কাজ করে?

চলুন জেনে নেই বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার আবিষ্কার, টেসলা কয়েল কি? এবং কিভাবে কাজ করে?

আপনি কি কখনও দেখেছেন স্পার্কিং বা বিদ্যুৎ চমকানোকে খুব কাছ থেকে? অথবা বাতাসে বিদ্যুৎ তৈরি হতে দেখেছেন? যদি না দেখে থাকেন, তাহলে টেসলা কয়েল আপনাকে অবাক করে দেবে! এই অসাধারণ যন্ত্রটি নিকোলা টেসলার এক যুগান্তকারী আবিষ্কার, যা উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ তৈরি করে এমন এক জাদুকরী খেলা দেখায়, যা দেখলে আপনি মুগ্ধ হবেন।

চলুন আজ আমরা জেনে নেই টেসলা কয়েল সম্পর্কে! টেসলা কয়েল কি? এবং কিভাবে কাজ করে?

টেসলা কয়েল কী?

টেসলা কয়েল কী?
টেসলা কয়েল আসলে কী?

টেসলা কয়েল একটি বিশেষ ধরনের রেজোন্যান্ট ট্রান্সফরমার সার্কিট, যার আবিষ্কারক বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা। এটি এমন একটি ডিভাইস যা হাই-ফ্রিকোয়েন্সি, হাই-ভোল্টেজ এবং লো-কারেন্টের বিকল্প কারেন্ট (AC) বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। সহজভাবে বললে, টেসলা কয়েল এমন এক প্রযুক্তি যা বৈদ্যুতিক শক্তিকে এমনভাবে রূপান্তর করে যে, তা অনেক দূর পর্যন্ত তারবিহীনভাবে প্রেরণ করা যায়। এটি সাধারণত দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত – একটি প্রাথমিক কয়েল এবং একটি সেকেন্ডারি কয়েল।

প্রাথমিক কয়েলের মাধ্যমে সিস্টেমে একটি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ তরঙ্গ তৈরি করা হয়, যা সেকেন্ডারি কয়েলের সঙ্গে রেজোন্যান্স এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। এই রেজোন্যান্স কয়েলের মধ্যে শক্তির কার্যকর স্থানান্তর ঘটায়। যখন এই দুটি কয়েল একই ফ্রিকোয়েন্সিতে রেজোন্যান্ট হয়, তখন সেকেন্ডারি কয়েলের মধ্যে তৈরি হয় হাই ভোল্টেজ। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েল থেকে স্পার্ক বা ইলেকট্রিক আর্ক তৈরি হতে দেখা যায়, যা চোখে দৃশ্যমান হয় এবং বৈদ্যুতিক শক্তির প্রভাব প্রতিফলিত করে।

আরও দেখুনঃ তারবিহীন বিদ্যুৎ প্রেরনে ডার্পার প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?

টেসলা কয়েল কিভাবে কাজ করে?

টেসলা কয়েল কিভাবে কাজ করে?
জেনেনিন, টেসলা কয়েল কিভাবে কাজ করে?

টেসলা কয়েলের কার্যপ্রণালী অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং এটি কয়েকটি প্রধান উপাদানের সমন্বয়ে কাজ করে। 

শুরুতে, একটি সাধারণ বিদ্যুৎ উৎস যেমন দেয়ালের সকেট থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণত কম ভোল্টেজ এবং হাই-কারেন্টের হয়ে থাকে। এই বিদ্যুৎ প্রথমে একটি স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমারের মধ্য দিয়ে যায়, যা কম ভোল্টেজকে কয়েক হাজার ভোল্টে রূপান্তরিত করে। এরপর হাই-ভোল্টেজের বিদ্যুৎ একটি ক্যাপাসিটরে জমা হয়, যা অস্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ শক্তি সংরক্ষণ করে রাখে। যখন ক্যাপাসিটরে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ জমা হয়, তখন সেটি স্পার্ক গ্যাপের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।

স্পার্ক গ্যাপটি দুইটি ইলেকট্রোডের মধ্যকার একটি ছোট ফাঁকা স্থান, যেখানে জমাকৃত বিদ্যুৎ এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে এটি বাতাসের মধ্য দিয়ে লাফিয়ে পড়ে এবং একটি স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করে। এই স্ফুলিঙ্গ সার্কিটকে দ্রুত বন্ধ ও চালু করার কাজ করে।

এই বিদ্যুৎ এরপর প্রাথমিক কয়েলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা অল্প সংখ্যক মোটা তার দিয়ে তৈরি এবং এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক কয়েলের খুব কাছেই থাকে সেকেন্ডারি কয়েল, যেখানে অনেক বেশি সংখ্যক পাতলা তার প্যাঁচানো থাকে। প্রাথমিক কয়েলে উৎপন্ন চৌম্বক ক্ষেত্র সেকেন্ডারি কয়েলে একটি উচ্চ ভোল্টেজ প্ররোচিত করে। 

তারের প্যাঁচ বেশি হওয়ায় এখানে ভোল্টেজ অনেক গুণ বেড়ে যায় – এটি লাখ লাখ ভোল্ট পর্যন্ত হতে পারে। অবশেষে, সেকেন্ডারি কয়েলের উপরে থাকা ধাতব গোল বা ডোনাট-আকৃতির বস্তু, যাকে টপ লোড বা টরয়েড বলা হয়, সেই উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎকে বাতাসে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে আমরা দীর্ঘ স্পার্ক বা করোনা ডিসচার্জ দেখতে পাই।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত ঘটে এবং একটি রেজোন্যান্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। এর মানে হলো, প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি কয়েলের ফ্রিকোয়েন্সি এমনভাবে টিউন করা হয় যাতে তারা একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং শক্তির স্থানান্তর সর্বোচ্চ হয়। এর ফলস্বরূপ, টেসলা কয়েল থেকে বাতাসে লম্বা, নীলচে-বেগুনি রঙের স্পার্ক বা বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়, যা দেখতে সত্যিই জাদুকরী মনে হয়।

টেসলা কয়েল বিজ্ঞানের এক অসাধারণ নিদর্শন, যা বিদ্যুৎকে এমন এক রূপে প্রদর্শন করে যা আমাদের অবাক করে তোলে। এটি নিকোলা টেসলার মেধার এক উজ্জ্বল উদাহরণ এবং আজও এটি বিদ্যুৎ প্রকৌশলের জগতে এক কৌতূহলপূর্ণ অধ্যায়।

আপনার যদি টেসলা কয়েল সম্পর্কে আরও কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না!

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Most Voted
Newest Oldest
Inline Feedbacks
View all comments