বাঙালি মানেই তো খাবার আর চিংড়ি মাছের প্রতি এক আলাদা টান! আর যদি হয় চিংড়ির মালাই কারি, তাহলে তো কথাই নেই। এই পদটি তার ক্রিমি টেক্সচার এবং সুস্বাদু ঘ্রাণের জন্য সারা বাংলায় বিখ্যাত। গরম ভাত, পোলাও বা রুটি – সবকিছুর সঙ্গেই এটি দারুণ জমে ওঠে।
তাই আজ আমরা ধাপে ধাপে জেনে নেব কীভাবে ঘরে বসেই তৈরি করবেন এই মজাদার চিংড়ির মালাই কারি, চলুন শুরু করা যাক!
চিংড়ির মালাই কারি তৈরির উপকরন
চিংড়ির মালাই কারি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো আপনার হাতের কাছেই পেয়ে যাবেন। দেখে নিন কি কি লাগবে –
উপকরন | পরিমান |
---|---|
চিংড়ি মাছ | ৫০০ গ্রাম (মাঝারি বা বড় সাইজের, খোসা ছাড়ানো ও ভালো করে পরিষ্কার করা) |
পেঁয়াজ বাটা | ২ টেবিল চামচ |
আদা বাটা | ১ টেবিল চামচ |
রসুন বাটা | ১ চা চামচ |
নারকেলের দুধ | ১ কাপ |
কাঁচা মরিচ | ৪-৫টি (স্বাদমতো, ফালি করে কাটা) |
শুকনো মরিচ | ২-৩টি (ঐচ্ছিক, ঝাল পছন্দ করলে) |
এলাচ | ৩-৪টি |
দারচিনি | ১ ইঞ্চি একটি টুকরা |
লবঙ্গ | ৩-৪টি |
তেজপাতা | ১টি |
জিরা গুঁড়ো | ১ চা চামচ |
ধুনিয়া গুঁড়ো | ১ চা চামচ |
হলুদ গুঁড়ো | ১/২ চা চামচ |
গরম মশলা গুঁড়ো | ১/২ চা চামচ |
লবণ | স্বাদমতো |
চিনি | ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক, স্বাদের ভারসাম্য রক্ষায়) |
সর্ষের তেল/সাদা তেল | ৪ টেবিল চামচ |
ঘি | ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক, রান্নার শেষে সুন্দর ঘ্রাণের জন্য) |
ধুনিয়া পাতা কুচি | সাজানোর জন্য |
আরও দেখুনঃ খাসির মাংস দিয়ে চুইঝালের রেসিপি, জিভে জল আনা এক পদ।
চিংড়ির মালাই কারি তৈরির পদ্মতি

চিংড়ি প্রস্তুত
প্রথমে চিংড়ি মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর এতে সামান্য নুন ও হলুদ গুঁড়ো মাখিয়ে প্রায় ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এতে মাছের ভেতরে লবণ প্রবেশ করবে এবং ভাজার সময় ছিঁড়ে যাবে না।
মশলা ভাজা
একটি কড়াইতে সর্ষের তেল বা সাদা তেল গরম করে নিন। তেল ভালোভাবে গরম হলে এতে এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা এবং শুকনো মরিচ ফোড়ন দিন। মশলা থেকে একটি সুন্দর সুগন্ধ বের হওয়া পর্যন্ত হালকাভাবে ভাজুন।
পেঁয়াজ ও আদা-রসুন কষানো
এবার কড়াইতে পেঁয়াজ বাটা যোগ করুন এবং হালকা সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন। পেঁয়াজ ভাজা হলে আদা বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে আরও ২-৩ মিনিট ধরে ভালো করে কষিয়ে নিন, যাতে কাঁচা গন্ধ সম্পূর্ণরূপে চলে যায়। এই ধাপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মশলা যত ভালো কষানো হবে, তরকারির স্বাদ তত ভালো হবে।
গুঁড়ো মশলা যোগ
কষানো মশলার মধ্যে জিরা গুঁড়ো, ধুনিয়া গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো এবং সামান্য পানি দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করুন। মশলা থেকে তেল ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত কষাতে থাকুন। প্রয়োজনে অল্প অল্প করে পানি যোগ করতে পারেন যাতে মশলা কড়াইয়ের নিচে লেগে না যায় বা পুড়ে না যায়।
চিংড়ি যোগ করা
মশলা ভালো করে কষানো হলে নুন-হলুদ মাখানো চিংড়ি মাছগুলো কড়াইতে দিয়ে হালকাভাবে নেড়েচেড়ে নিন। চিংড়ি মাছ খুব বেশি ভাজবেন না, এতে মাছ শক্ত হয়ে যেতে পারে। মাত্র ১-২ মিনিট কষালেই যথেষ্ট।
নারকেলের দুধ ও জল
এবার কড়াইতে নারকেলের ঘন দুধ এবং ফালি করে কাটা কাঁচা মরিচ যোগ করুন। ঝোলের ঘনত্ব অনুযায়ী সামান্য গরম পানি যোগ করতে পারেন, তবে খেয়াল রাখবেন ঝোল যেন বেশি পাতলা না হয়ে যায়। এই পর্যায়ে চিনি (যদি ব্যবহার করেন) এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
রান্না করা
কড়াইটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন এবং মাঝারি আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ না চিংড়ি মাছ পুরোপুরি সেদ্ধ হয় এবং ঝোল ঘন হয়ে আসে। চিংড়ি মাছ সেদ্ধ হতে খুব বেশি সময় লাগে না, প্রায় ৫-৭ মিনিটই যথেষ্ট। এই সময়টা চিংড়ির আকার এবং আপনার রান্নার পদ্ধতি অনুসারে ভিন্ন হতে পারে।
শেষের কাজ
সবশেষে যদি ব্যাবহার করেন তাহলে গরম মশলা গুঁড়ো এবং ১ চা চামচ ঘি ছড়িয়ে দিন। হালকা নেড়েচেড়ে চুলো বন্ধ করে দিন। ঘি ব্যবহার করলে মালাই কারির সুগন্ধ আরও বেড়ে যাবে।
পরিবেশন
একটি সুন্দর পাত্রে চিংড়ির মালাই কারি ঢেলে উপর থেকে ধুনিয়া পাতা কুচি দিয়ে সাজিয়ে নিন। গরম গরম ভাত, পোলাও বা রুটির সাথে পরিবেশন করুন এই মজাদার চিংড়ির মালাই কারি।
কিছু টিপস
- চেষ্টা করুন সব সময় টাটকা চিংড়ি ব্যবহার করতে। টাটকা মাছের স্বাদ এবং গুণগত মান সবসময়ই ভালো হয়।
- বাজারের কেনা রেডিমেড নারকেলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন, তবে বাড়িতে তৈরি করা টাটকা নারকেলের দুধের স্বাদ এবং ঘ্রাণ অতুলনীয়। সময় পেলে তাজা নারকেল থেকে দুধ বের করে ব্যবহার করুন।
- চিংড়ি মাছ খুব বেশি ভাজলে শক্ত হয়ে যায় এবং এর জুসিনেস নষ্ট হয়ে যায়। তাই হালকা করে কষিয়ে নিন।
- মশলা কষানোর সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। ভালো করে কষালে রান্নার স্বাদ অনেক গুণ বেড়ে যায় এবং মশলার কাঁচা গন্ধ চলে যায়।
- নুন, ঝাল, মিষ্টির ভারসাম্য আপনার পছন্দ অনুযায়ী ঠিক করুন। নারকেলের দুধের কারণে অনেক সময় একটু মিষ্টি স্বাদ আসে, তাই চিনি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন।
এই সহজ রেসিপি অনুসরণ করে আপনিও তৈরি করতে পারবেন রেস্টুরেন্টের স্বাদের চিংড়ির মালাই কারি। এটি আপনার পারিবারিক ভোজ বা বিশেষ অতিথিদের জন্য একটি দারুণ পদ হতে পারে, যা সবার মন জয় করবে নিশ্চিত!
আপনি কি আগে কখনো চিংড়ির মালাই কারি তৈরি করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?