কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক ৫টি দারুন খাবার!

জেনেনিন কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক এমন ৫টি খাবারের নাম!

আমাদের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি। এটি কেবল রক্ত পরিশোধনই করে না, বরং শরীরের জলীয় ভারসাম্য, খনিজ পদার্থের মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিডনি সুস্থ না থাকলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ সঠিকভাবে বের হতে পারে না, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিডনিকে সুস্থ রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাস একটি মূল চাবিকাঠি। সঠিক খাবার কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। 

তাই আসুন, জেনে নিই এমন ৫টি দারুণ খাবার সম্পর্কে, যা আপনার কিডনিকে সতেজ ও কর্মঠ রাখতে সাহায্য করবে।

বাঁধাকপি

বাঁধাকপি
বাঁধাকপি-তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন K এবং C | Image by Matthias Böckel from Pixabay

বাঁধাকপি কিডনি রোগীদের জন্য একটি চমৎকার সবজি কারণ এতে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ খুব কম থাকে। উচ্চ পটাশিয়াম কিডনির ওপর চাপ বাড়াতে পারে, তাই বাঁধাকপি একটি নিরাপদ বিকল্প। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন K এবং C, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে কিডনির কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, এতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়াতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। সালাদ বা সেদ্ধ করে বিভিন্ন উপায়ে এটি খাওয়া যায়।

ফুলকপি

ফুলকপি
ফুলকপি-তে য়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, K এবং ফোলেট | Image by Couleur from Pixabay

বাঁধাকপির মতোই ফুলকপি কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, K এবং ফোলেট। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যারা উচ্চ পটাশিয়ামের কারণে আলু বা শস্য জাতীয় খাবার সীমিত করতে চান, তাদের জন্য ফুলকপি একটি চমৎকার বিকল্প। এটিকে ভর্তা, স্যুপ বা সবজি হিসেবে বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়।

আরও দেখুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কোন খাবারগুলো খাবেন?

রসুন

রসুন
রসুন কিডনির জন্যও খুবই উপকারী | Photo by team voyas on Unsplash

রসুন শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি কিডনির জন্যও খুবই উপকারী। রসুনে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান কিডনিকে সুরক্ষা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও দারুণ কার্যকর। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ, তাই রসুন খেলে এই ঝুঁকি কমে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি লবণ বা সোডিয়ামের একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে কাজ করে। রান্নায় লবণের পরিমাণ কমিয়ে রসুনের গুঁড়ো বা কাঁচা রসুন ব্যবহার করলে তা কিডনির স্বাস্থ্যকে আরও ভালো রাখে।

আপেল

আপেল
আপেলে রয়েছে এক ধরনের বিশেষ ফাইবার, যার নাম পেকটিন | Image by Michael Strobel from Pixabay

“প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তারকে দূরে রাখে” – এই প্রবাদটি কিডনির স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও সত্যি। আপেলে রয়েছে এক ধরনের বিশেষ ফাইবার, যার নাম পেকটিন। এই পেকটিন রক্তে শর্করার মাত্রা এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস কিডনি রোগের প্রধান কারণ, তাই আপেল খেলে এই সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। আপেলের খোসাতেও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিডনির কোষকে রক্ষা করে।

বেরিজ (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি)

বেরিজ (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি)
বিভিন্ন প্রকার বেরিজ যেমন – স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়াক | Image by Jorge Lujan from Pixabay

স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি বা রাস্পবেরির মতো ছোট ফলগুলো হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ারহাউস। এতে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন অ্যান্থোসায়ানিন এবং এলাজিট্যানিন কিডনির কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের হাত থেকে রক্ষা করে। এই ফলগুলো প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হলেও এদের ক্যালোরি এবং পটাশিয়ামের মাত্রা খুব কম, যা কিডনির জন্য নিরাপদ। নিয়মিত এসব ফল খেলে কিডনি কোষের কার্যকারিতা বাড়ে এবং কিডনি সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমে।

কিডনি ভালো রাখার জন্য আরও কিছু টিপস

  • কিডনির মূল কাজ হলো শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া। এই কাজটি সঠিকভাবে করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই জরুরি। এটি কিডনিতে পাথর জমা হওয়াও প্রতিরোধ করে।
  • অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ করলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং কিডনির ওপর চাপ পড়ে। তাই রান্নায় লবণের পরিমাণ সীমিত রাখুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করলে রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে তা কিডনির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
সতর্কতা: যদি আপনার কিডনি সংক্রান্ত কোনো রোগ থাকে, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় কোনো বড় পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, একটি সুস্থ জীবনযাত্রাই আপনার কিডনির সুস্থতার মূল ভিত্তি।
Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Most Voted
Newest Oldest
Inline Feedbacks
View all comments