আমাদের চারপাশে এমন অনেক ভেষজ উপাদান রয়েছে যা আমরা হয়তো দৈনন্দিন জীবনে সেভাবে ব্যবহার করি না, অথচ সেগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে জানলে অবাক হতে হয়। তুলসী তেমনই একটি অসাধারণ ঔষধি গাছ। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এর দেখা মেলে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তুলসী একটি পবিত্র উদ্ভিদ হলেও, এর ভেষজ গুণাবলী এটিকে প্রকৃত অর্থেই মহিমান্বিত করেছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তুলসীকে ‘ভেষজের রানী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণভাবে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কয়েকটা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে বা তুলসী চা পান করলে সর্দি, কাশি, জ্বর এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
আরও দেখুনঃ কাশি কমানোর ঘরোয়া উপায়, কি করবেন দেখে নিন
সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি বা অ্যাজমার মতো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় তুলসী খুবই কার্যকর। তুলসীর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাবলী গলা ব্যথা, কফ এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে বা তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আজকের দ্রুতগতির জীবনে মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা। তুলসী পাতায় অ্যাডাপ্টোজেনিক গুণাবলী রয়েছে, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের কর্টিসল হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মনকে শান্ত রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত তুলসী সেবনে ভালো ঘুম হয় এবং অবসাদ দূর হয়।
এছাড়া, তুলসী পাতা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস, বদহজম এবং পেটের ফোলাভাব কমাতে কার্যকর। তুলসী গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।
তুলসীর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলী ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কার্যকরী। ব্রণ, ফুসকুড়ি এবং অন্যান্য ত্বকের সংক্রমণে তুলসী পাতা বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এটি ত্বককে পরিষ্কার ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতেও তুলসী বেশ উপকারী। তুলসী পাতা নারকেল তেলের সাথে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে সেই তেল চুলে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। এটি মাথার ত্বকের সংক্রমণ কমাতেও সাহায্য করে।
তুলসী পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে বা তুলসীযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
এছারাও, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে তুলসী পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
এগুলো তুলসী পাতার কিছু প্রধান উপকারিতা। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো ভেষজ ব্যবহারের আগে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি আপনার কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকে বা আপনি কোনো ঔষধ সেবন করে থাকেন।
আপনি কি কখনো তুলসী পাতা ব্যবহার করেছেন?












