প্রকৃতির অপার বিস্ময় আর মানব ইতিহাসের অমূল্য রত্ন ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। কানাডার বানফ থেকে পেরুর মাচু পিচু, আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে নিউজিল্যান্ডের ফিয়র্ডল্যান্ড – প্রতিটি স্থান তার নিজস্ব সৌন্দর্য ও তাৎপর্যের জন্য বিখ্যাত। আমরা জানবো ইগুয়াজু জলপ্রপাত, হা লং বে, সান্তোরিনি, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, সালার দে উইয়ুনি এবং ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের মতো অসাধারণ গন্তব্যগুলো। চলুন, এই স্থানগুলোর সৌন্দর্য ও ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
বানফ জাতীয় উদ্যান, কানাডা (Banff National Park, Canada)

বানফ ন্যাশনাল পার্ক, কানাডার প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যানগুলির মধ্যে একটি, যা ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি অ্যালবার্টা প্রদেশের রকি পর্বতমালায় অবস্থিত। এর মনোরম দৃশ্যাবলী, উঁচু পর্বতমালা, স্বচ্ছ হ্রদ, ঘন বন এবং হিমবাহ দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে। পার্কটি ৬,৬৪১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, যেমন – গ্রিজলি, কালো ভাল্লুক, এল্ক, হরিণ এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
বানফ ন্যাশনাল পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের কার্যকলাপ উপভোগ করার সুযোগ আছে, যেমন – পাহাড়ে চড়া, তাঁবুতে রাত কাটানো, লেক লুইসে কায়াকিং, বো নদীতে নৌকা চালানো এবং শীতকালে বরফের উপর স্লাইডিং করা। এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লেক লুইস, যা চারপাশের পর্বতশ্রেণী এবং সবুজ জলের কারণে খুবই সুন্দর। এছাড়াও, বানফ টাউন এ বিভিন্ন রিসোর্ট, দোকান এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। এই পার্কটি শুধু কানাডার নয়, বিশ্বজুড়ে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এক বিশেষ স্থান।
মাচু পিচু, পেরু (Machu Picchu, Peru)

মাচু পিচু, পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার উপরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ইনকা শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৪৩০ মিটার (৭,৯৭০ ফুট) উচ্চতায় এর অবস্থান। ১৫ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইনকা সম্রাট পাচাকুটির সময়কালে এটি নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন এটি একটি রাজকীয় স্থান অথবা একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হত।
মাচু পিচু তার অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে পাথর কেটে তৈরি করা এর দেওয়াল, সিঁড়ি এবং বিভিন্ন কাঠামো ইনকাদের উন্নত প্রকৌশল জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে সূর্য মন্দির, তিনটি জানালার মন্দির এবং ইন্টিহুয়াটানা পাথর, যা সম্ভবত একটি সৌর ঘড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হত।
স্প্যানিশ ঔপনিবেশিকদের দ্বারা ইনকা সভ্যতা ধ্বংসের সময় মাচু পিচু অক্ষত ছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৯১১ সালে আমেরিকান ঐতিহাসিক Hiram Bingham এটিকে পুনরায় বিশ্বের নজরে আনেন। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বিশ্বের নতুন সাতটি Wonders এর মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই ঐতিহাসিক স্থানটি দেখতে আসেন। এর রহস্যময়তা এবং সৌন্দর্য আজও মানুষকে মুগ্ধ করে।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (Grand Canyon, USA)

গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত একটি বিশাল এবং মনোরম গিরিখাত। এটি কলোরাডো নদীর লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ক্ষয়ের কারনে তৈরি করেছে, যা প্রায় ২৭৭ মাইল দীর্ঘ, ১৮ মাইল পর্যন্ত চওড়া এবং প্রায় এক মাইল গভীর। এর বিভিন্ন স্তরের শিলা ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের এক অসাধারণ চিত্র তুলে ধরে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের দেওয়ালগুলি বিভিন্ন রঙে রাঙানো, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, বরং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, যারা এর সৌন্দর্য ও বিশালতা দেখে মুগ্ধ হন। হাইকিং, রাফটিং এবং এর প্রান্ত ধরে হেঁটে বেড়ানো এখানকার জনপ্রিয় কার্যকলাপ।
ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান, নিউজিল্যান্ড (Fiordland National Park, New Zealand)

নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ফিওর্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান দেশটির বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান। ১২,৬০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান টে ওয়াহিপৌনামুর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে বন্ধুর পর্বতমালা, গভীর হিমবাহ-খোদিত উপত্যকা এবং ১৪টি শ্বাসরুদ্ধকর ফিয়র্ড (fjord) এর সমন্বয়ে গঠিত ফিয়র্ডল্যান্ড তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।
এখানে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের গভীরতম হ্রদ, হাউরোকো এবং বিশ্বের অন্যতম উঁচু জলপ্রপাত, Sutherland Falls। ঘন রেইনফরেস্ট, আল্পাইন হ্রদ এবং বরফ-ঢাকা পর্বতচূড়া এই উদ্যানের শোভা আরও বৃদ্ধি করেছে। দুর্গম ভূখণ্ড এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে মানুষের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম, তাই এটি একটি আদিম এবং অস্পৃশ্য প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখেছে।
ফিয়র্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান বিভিন্ন প্রকার স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের আবাসস্থল। এখানে টাকাহে (takahē) এবং কাকাপো (kākāpō) এর মতো বিরল উড়তে না পারা পাখিও দেখা যায়। হাইকিং, বোটিং এবং Scenic flight এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে পর্যটকদের জন্য প্রধান প্রবেশদ্বার এবং তথ্য কেন্দ্র Te Anau তে অবস্থিত। প্রকৃতির অপার বিস্ময় দেখার জন্য ফিয়র্ডল্যান্ড জাতীয় উদ্যান একটি অসাধারণ গন্তব্য।
আরও দেখুনঃ সুন্দরবন, প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার হাতছানি
ইগুয়াজু/ইগুয়াকু জলপ্রপাত, আর্জেন্টিনা/ব্রাজিল (Iguazu Falls, Argentina/Brazil)

আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সীমান্তে অবস্থিত ইগুয়াজু জলপ্রপাত একটি বিশাল জলপ্রপাতমালা। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জলপ্রপাত ব্যবস্থা। প্রায় ২৭৫টি ছোট-বড় জলপ্রপাত একত্রিত হয়ে এই ইগুয়াজু জলপ্রপাত তৈরি করেছে, যা প্রায় ২.৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর সবচেয়ে বিখ্যাত জলপ্রপাত হলো “ডেভিল’স থ্রোট”, যা ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো এবং প্রায় ৮০ মিটার উঁচু।
স্থানীয় গুয়ারানি ভাষায় “ইগুয়াজু” শব্দের অর্থ “বিশাল জল”। জলপ্রপাতটি দুটি দেশেই জাতীয় উদ্যানের অংশ – আর্জেন্টিনার দিকে ইগুয়াজু ন্যাশনাল পার্ক এবং ব্রাজিলের দিকে ইগুয়াকু ন্যাশনাল পার্ক। উভয় পার্কই জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এবং ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
পর্যটকদের জন্য ইগুয়াজু জলপ্রপাত এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। জলপ্রপাতের চারপাশের ঘন সবুজ বনভুমি এবং জল পতনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল উভয় দিক থেকেই জলপ্রপাতটি দেখার সুযোগ রয়েছে এবং উভয় দিকেই বিভিন্ন ওয়াকওয়ে ও ভিউপয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে জলপ্রপাতের বিভিন্ন অংশ উপভোগ করা যায়। এখানে পর্যটকদের জন্য বোট রাইডের ব্যবস্থাও আছে, যা জলপ্রপাতের খুব কাছে নিয়ে যায় এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেয়।
হা লং বে, ভিয়েতনাম (Ha Long Bay, Vietnam)

হা লং বে, ভিয়েতনামের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক বিস্ময়। এর নামের অর্থ “অবতরণকারী ড্রাগনের উপসাগর”। এটি হাজার হাজার চুনাপাথরের স্তম্ভ এবং ছোট দ্বীপ সমুদ্রের সবুজ জল থেকে উঠে এসে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। এই দ্বীপগুলির বিভিন্ন আকার ও আকৃতি দেখলে অবাক হতে হয়। কোনোটি যেন বিশাল পাথরের থাম, আবার কোনোটি দেখতে পাখির মতো।
এই এলাকাটি প্রায় ১৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এবং এখানে প্রায় ১,৯৬৯টি ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে। অনেক দ্বীপে মনোরম গুহা দেখা যায়, যেমন ডাউ গো গুহা (Dau Go Cave) এখানকার সবচেয়ে বড় গুহাগুলির মধ্যে একটি। হা লং বে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। একসময় এটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল।
ইউনেস্কো ১৯৯৪ সালে হা লং বে-কে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। এর শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং জীববৈচিত্র্য একে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। এখানকার স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতিও বেশ আকর্ষণীয়। যারা প্রকৃতি ও শান্ত পরিবেশ ভালোবাসেন, তাদের জন্য হা লং বে এক অসাধারণ গন্তব্য।
সান্তোরিনি, গ্রীস (Santorini, Greece)

সান্তোরিনি, গ্রীসের এক অসাধারণ দ্বীপ, যা তার মনোরম দৃশ্য, বিশেষ করে ক্যালডেরা (Caldera) এবং সাদা-নীল রঙের ঘরবাড়ির জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এটি সাইক্লেডস দ্বীপপুঞ্জের (Cyclades) অংশ এবং এজিয়ান সাগরের (Aegean Sea) দক্ষিণে অবস্থিত। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই দ্বীপের বিশেষ ভূ-প্রকৃতি তৈরি হয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য।
সান্তোরিনির প্রধান শহর ফিরা (Fira), ক্যালডেরার কিনারায় অবস্থিত এবং এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এছাড়াও, ইয়া (Oia) গ্রামের মনোরম দৃশ্য এবং এখানকার সূর্যাস্তও খুব বিখ্যাত। দ্বীপের ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে আক্রোটিরি অন্যতম, যা ব্রোঞ্জ যুগের একটি উন্নত শহর ছিল এবং আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের নিচে চাপা পড়েছিল।
সান্তোরিনি তার বিশেষ ধরনের ওয়াইন এবং স্থানীয় খাবারের জন্যও পরিচিত। এখানকার দ্রাক্ষাক্ষেত্রগুলি(আঙ্গুর খেত) আগ্নেয়গিরির মাটিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ, যা এখানকার ওয়াইনকে একটি আলাদা স্বাদ দেয়। সব মিলিয়ে, সান্তোরিনি কেবল একটি সুন্দর দ্বীপ নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়।
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, অস্ট্রেলিয়া (Great Barrier Reef, Australia)

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, যা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের উপকূলে অবস্থিত, পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর ব্যবস্থা। এটি ২,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এবং প্রায় ৩,০০০ টি পৃথক রিফ এবং ৯০০ টিরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এই বিশাল জীবন্ত কাঠামোটি মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান এবং এটি জীবন্ত প্রাণীদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম একক কাঠামো।
অবিশ্বাস্য জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল এই রিফ, যেখানে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির মাছ, ৪০০ প্রজাতির প্রবাল এবং ৪০০০ প্রজাতির মোলাস্ক রয়েছে। এছাড়াও এখানে বিপন্ন ডুগং এবং সবুজ কচ্ছপের মতো প্রজাতিও দেখা যায়। এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা পর্যটন এবং মৎস্য শিল্পের মাধ্যমে বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহের উৎস।
তবে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের কারণে এই মূল্যবান বাস্তুসংস্থানটি হুমকির মুখে। প্রবাল ব্লিচিং এবং সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলি রিফের স্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। এই প্রাকৃতিক আশ্চর্যকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সালার দে উয়ুনি, বলিভিয়া (Salar de Uyuni, Bolivia)

বলিভিয়ার সালার দে উয়ুনি পৃথিবীর বৃহত্তম লবণ সমভূমি। এটি বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের পোতোসি প্রদেশে অবস্থিত। এটি প্রায় ১০,৫৮২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই লবণাক্ত ভূমিটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,৬৫০ মিটার (১১,৯৭৮ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। প্রাচীনকালে এখানে বেশ কয়েকটি হ্রদ ছিল, যা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই বিশাল লবণের স্তর তৈরি হয়েছে।
সালার দে উইয়ুনি তার দিগন্ত বিস্তৃত সাদা লবণের চাদর এবং মাঝে মাঝে সৃষ্ট অগভীর জলের জন্য বিখ্যাত, যা আকাশকে প্রতিফলিত করে এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি করে, যাকে “পৃথিবীর বৃহত্তম আয়না” বলা হয়। এখানে কিছু দ্বীপও দেখা যায়, যেমন ইনকাহুয়াসি দ্বীপ, যা দৈত্যাকার ক্যাকটাসে পূর্ণ। এই সমভূমিটি লিথিয়ামের একটি বিশাল উৎস, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান, যেখানে লবণের হোটেল এবং অদ্ভুত প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, জাম্বিয়া/জিম্বাবুয়ে (Victoria Falls, Zambia/Zimbabwe)

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, স্থানীয়ভাবে “মোসি-ওয়া-তুন্যা” (“ধোঁয়া যা গর্জন করে”) নামে পরিচিত, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ের সীমান্তে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। জাম্বেজি নদীর উপর অবস্থিত, এটি বিশ্বের বৃহত্তম জলপ্রপাতগুলির মধ্যে একটি, যা প্রায় ১.৭ কিলোমিটার চওড়া এবং ১০৮ মিটার উঁচু। এর বিশাল জলরাশি একটি সংকীর্ণ খাদে পতিত হয়, যা একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে এবং কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও এর শব্দ শোনা যায়। জলপ্রপাতের চারপাশের এলাকাটি ঘন রেইনফরেস্ট দ্বারা বেষ্টিত, যা বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। David Livingstone ১৮৫৫ সালে প্রথম ইউরোপীয় হিসাবে এই জলপ্রপাতটি দেখেন এবং ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে এর নামকরণ করেন। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবেও স্বীকৃত।
এই দশটি স্থান আমাদের পৃথিবীর সৌন্দর্যের সামান্য উদাহরণ মাত্র। প্রতিটি স্থানের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ রয়েছে যা বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। সুযোগ পেলে এই মনোমুগ্ধকর স্থানগুলো নিজের চোখে দেখে আসা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
আপনি কি এর মধ্যে কোন কোন স্থান ভ্রমণ করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কমেন্ট এ জানাতে ভুলবেন না!