বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, এবং এর মাধ্যমে তৈরি কনটেন্টের পরিমাণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের লেখা, ছবি, এমনকি ভিডিও পর্যন্ত AI দিয়ে তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাদার ক্ষেত্রে AI-জেনারেটেড কনটেন্ট শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এটি যেমন তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ে সাহায্য করে, তেমনি সৃজনশীলতার মৌলিকত্ব রক্ষায়ও সহায়ক হয়।
আজকাল অনেক AI কনটেন্ট ডিটেক্টর টুল পাওয়া যায়, যার মধ্যে কিছু বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। নিচে এমন সেরা ৫টি ফ্রি টুল নিয়ে আলোচনা করা হলো যা আপনাকে AI দিয়ে তৈরি কনটেন্ট শনাক্ত করতে সাহায্য করবে –
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
ZeroGPT

ZeroGPT একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকরী AI কনটেন্ট ডিটেকশন টুল, যা ব্যবহারকারীদের সহজে এআই জেনারেটেড এবং মানুষের লেখা কনটেন্টের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এর ব্যবহার পদ্ধতিও অত্যন্ত সহজ – ব্যবহারকারী শুধু নির্দিষ্ট টেক্সটটি কপি করে পেস্ট করলেই, ZeroGPT খুব দ্রুত বিশ্লেষণ করে জানিয়ে দেবে সেই কনটেন্টটি কতটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি।
বিশেষ করে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংবাদিকদের জন্য এটি একটি দারুণ সহায়ক টুল। কারণ এটি উচ্চমাত্রার নির্ভুলতা বজায় রেখে লেখার উৎস শনাক্ত করতে সক্ষম। ZeroGPT তার সহজ ইউজার ইন্টারফেস, দ্রুত ফলাফল এবং নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণের জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এইসব গুণাবলির কারণে ZeroGPT আজ এআই কনটেন্ট যাচাইয়ের একটি নির্ভরযোগ্য টুল হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আরও দেখুনঃ আপনার পাসওয়ার্ড কি হ্যাকারদের হাতে চলেগেছে? জেনেনিন এই টুলগুলো দিয়ে!
GPTZero

GPTZero হল একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য কনটেন্ট বিশ্লেষণ টুল, যা মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এই টুলটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো – এটি শুধু AI দ্বারা তৈরি কনটেন্ট শনাক্ত করেই থেমে থাকে না, বরং টেক্সটের কোন নির্দিষ্ট অংশটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে লেখা হয়েছে, সেটিও স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে দেখায়। এর ফলে শিক্ষকরা সহজেই বুঝতে পারেন, শিক্ষার্থীর উপস্থাপিত কনটেন্ট কতটা মৌলিক।
GPTZero মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক্স ব্যবহার করে – “পারপ্লেক্সিটি” (Perplexity) ও “বার্সটিনেস” (Burstiness)। পারপ্লেক্সিটি মেট্রিক্স টেক্সটের জটিলতা এবং প্রাকৃতিক ভাষার সাথে সামঞ্জস্য পরিমাপ করে, যেখানে বার্সটিনেস মেট্রিক্সটি টেক্সটের বৈচিত্র্য এবং বাক্যের পরিবর্তনশীলতা বিশ্লেষণ করে। এই দুটি মেট্রিক্সের সমন্বয়ে GPTZero কনটেন্টের মানবীয়তা যাচাই করে এবং একটি নিখুঁত রিপোর্ট প্রদান করে। এ কারণে এটি শিক্ষাক্ষেত্রে AI দিয়ে তৈরি নকল কাজ শনাক্তে একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Content at Scale AI Content Detector

Content at Scale একটি AI কনটেন্ট জেনারেটর টুল কিন্তু তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর AI কনটেন্ট ডিটেকশন টুলও অফার করে থাকে। এই টুলটি AI দ্বারা তৈরি কনটেন্ট শনাক্ত করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, এবং এটি কাজ করে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ও নিখুঁতভাবে।
আপনি যদি একজন ডিজিটাল মার্কেটার, কনটেন্ট রাইটার, ব্লগার অথবা কোনো সংস্থার কনটেন্ট ম্যানেজার হয়ে থাকেন, তবে এই টুলটি আপনার সহায়ক হতে পারে। এটি কনটেন্টের প্রতিটি বাক্য বিশ্লেষণ করে বলে দিতে পারে তা মানুষের লেখা কিনা, নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা তৈরি। এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রকাশিত বা আপলোড করা কনটেন্টের মৌলিকতা ও স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করতে পারবেন।
Writer AI Content Detector

Writer.com-এর AI Content Detector একটি আধুনিক এবং শক্তিশালী অনলাইন টুল, যা সম্পূর্ণভাবে বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এই টুলটি শুধুমাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কনটেন্ট শনাক্ত করতেই সক্ষম নয়, বরং এটি লেখার গুণমান বিশ্লেষণ এবং ব্যাকরণগত ত্রুটি চিহ্নিত করতেও সাহায্য করে। ফলে একজন কনটেন্ট রাইটার বা শিক্ষার্থী তাঁর লেখাকে আরও নিখুঁত ও পেশাদার করে তুলতে পারেন সহজেই।
Writer AI Content Detector-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস। এমনকি যাঁরা প্রযুক্তিতে নতুন, তাঁরাও সহজেই এই টুল ব্যবহার করতে পারেন কোনো জটিলতা ছাড়াই। কনটেন্ট মার্কেটিং, ব্লগিং, একাডেমিক লেখালেখি কিংবা যেকোনো ধরণের প্রফেশনাল রাইটিং-এর জন্য এই টুলটি অত্যন্ত কার্যকর ও সহায়ক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর কনটেন্ট যাচাই এবং উন্নতমানের লেখালেখির জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য টুল হিসেবে বিবেচিত।
Crossplag

Crossplag হলো একটি উন্নত মাল্টিফাংশনাল টুল, যা কেবলমাত্র নকল কনটেন্ট শনাক্ত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা তৈরিকৃত কনটেন্টও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিহ্নিত করতে সক্ষম। এটি একাধিক ভাষা সমর্থন করে, যার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী ব্যবহারকারীর জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি সমাধান হয়ে উঠেছে।
Crossplag-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর শক্তিশালী অ্যালগরিদম, যা বিভিন্ন ধরনের জেনারেটিভ এআই মডেল দ্বারা তৈরি টেক্সট বিশ্লেষণ করে নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে যে, সেটি মানুষের লেখা নাকি AI দ্বারা লেখা। গবেষণা, একাডেমিক রচনাপত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা অনলাইন কনটেন্ট যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই টুলটি বিশেষভাবে কার্যকর। এটি শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, বরং কনটেন্ট নির্মাতা, সাংবাদিক এবং লেখকদের কাছেও একটি মূল্যবান সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই টুলগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই AI জেনারেটেড কনটেন্ট শনাক্ত করতে পারবেন এবং তথ্যের সঠিকতা ও মৌলিকত্ব নিশ্চিত করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, কোনো টুলই ১০০% নির্ভুল নয়। তাই একাধিক টুলের সাহায্য নেওয়া এবং নিজেদের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করা সবসময়ই বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার কি আরও কোনো টুল সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করছে?