ঘর সাজানো মানে কি কেবলই নতুন আর দামি আসবাবপত্র কেনা অথবা প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে নতুন করে ঘরের রং করানো? একদমই না! যারা এমনটা ভাবেন, তারা সম্পূর্ণ ভুল ভাবেন। সামান্য বুদ্ধি খাটিয়ে আর হাতের কাছে থাকা সাধারণ জিনিসপত্র ব্যবহার করেই আপনি আপনার প্রিয় ঘরটিকে দিতে পারেন এক নতুন রূপ, এক নতুন সজীবতা। এর জন্য আপনাকে কোনো অতিরিক্ত খরচ করতে হবে না বা আপনার বাজেট নিয়ে ভাবতে হবে না।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, “টাকা খরচ না করে আবার ঘর সাজানো যায় নাকি?” হ্যাঁ, যায়! আর এটা কোনো জাদু নয়, বরং সামান্য সৃজনশীলতা আর কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমেই সম্ভব। আপনার চারপাশের জিনিসগুলো একটু ভিন্নভাবে ব্যবহার করুন, দেখবেন আপনার ঘর হয়ে উঠেছে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয়।
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন

ঘরকে সুন্দর ও আরামদায়ক করে তুলতে হলে শুরুটা করতে হবে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার মধ্য দিয়ে। আমাদের অনেকেরই ঘরে এমন অনেক কিছু জিনিস জমে থাকে যা বছরের পর বছর ব্যবহার করা হয় না – যেমন পুরোনো খবরের কাগজ, পুরনো ম্যাগাজিন, ভাঙাচোরা আসবাব, অচল ইলেকট্রনিক সামগ্রী কিংবা পুরনো জামাকাপড়ও। এগুলোর একটিও আপনার দৈনন্দিন জীবনে কোনো কাজে আসে না, বরং শুধুই স্থান দখল করে রাখে এবং ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করে।
এই অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ঘর থেকে সরিয়ে ফেললে ঘর আরও খোলামেলা ও পরিচ্ছন্ন দেখায়। অল্প আসবাব, নির্দিষ্ট প্রয়োজনে ব্যবহৃত সামগ্রী, আর গোছানো পরিবেশ আপনার ঘরের সৌন্দর্য যেমন বাড়াবে, তেমনি বসবাসও আরও স্বস্তিদায়ক করে তুলবে।
আরও দেখুনঃ সময় বাঁচানোর জন্য প্রতিদিনের ৫টি দারুণ হ্যাকস
জিনিসপত্রের স্থান পরিবর্তন করুন

আপনার ঘরের পুরোনো আসবাবপত্র কিংবা সাজানোর জিনিসপত্রগুলো কি বছরের পর বছর ধরে একই জায়গায় অবস্থান করছে? অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না, দৈনন্দিন অভ্যস্ততার কারণে আমাদের প্রিয় ঘরটি একঘেয়ে ও নিরানন্দ লাগতে শুরু করেছে। অথচ খুব সাধারণ কিছু পরিবর্তন এনে ঘরের পরিবেশে আনতে পারেন এক ঝলক সতেজতা ও নতুনত্ব।
ভাবুন তো, বসার ঘরের সেই পুরোনো সোফাসেটটি যদি শোবার ঘরের জানালার পাশে নিয়ে রাখা হয়? কিংবা ডাইনিং টেবিলের পাশে সাজিয়ে রাখা সেই ছোট্ট ল্যাম্পটি যদি অন্য কোনও কোণে, যেমন বারান্দার পাশে স্থান পায় – কেমন হবে দেখতে? খুব বেশি কিছু না করেই ঘরটিকে লাগবে নতুন, প্রাণবন্ত এবং সৃজনশীল।
শুধু বড় জিনিসগুলো নয়, তাকের বইগুলোর অবস্থানও বদলে দিতে পারেন। বইগুলোকে একটু এলোমেলোভাবে কিংবা ভাগ ভাগ করে আলাদা আলাদা তাক সাজিয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে কিছু নতুন রঙিন কাভার, ছোট শোপিস, কিংবা ইনডোর প্ল্যান্টও যোগ করতে পারেন সেই তাকজোড়ায়। এতে ঘরের চেহারা হবে আরও আকর্ষণীয়, আর আপনিও অনুভব করবেন একধরনের মানসিক প্রশান্তি ও পরিবর্তনের আনন্দ।
দেয়াল সাজানোর দিকে মনোযোগ দিন

ঘরের সাজসজ্জায় দেয়ালের ভূমিকা অনেক বড়। একটি সুন্দরভাবে সাজানো দেয়াল যেমন ঘরের শোভা বাড়ায়, তেমনি একটি খালি ও নির্জন দেয়াল ঘরের সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান করে দেয়। কিন্তু সবসময় নতুন ছবি বা আর্টওয়ার্ক না কিনে সৃজনশীলভাবে ঘরের দেয়াল সাজানো যেতে পারে।এক্ষেত্রে, আপনার নিজের আঁকা ছবি থাকলে, সেগুলোকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করে দেয়ালে টাঙিয়ে দিন। যদি আঁকাআঁকি করতে না পারেন, তবু চিন্তার কিছু নেই – পছন্দের কোনো পত্রিকার বিশেষ কভার পেজ, আর্ট আর্টিকেল বা চোখ জোড়ানো কোনো বিজ্ঞাপনের পৃষ্ঠা কেটে নিয়ে সেগুলো ফ্রেম করে ব্যবহার করতে পারেন।
বাচ্চাদের আঁকা ছবি দিয়েও চমৎকার একটি আর্ট গ্যালারির আবহ তৈরি করা যায় শিশুর হাতে আঁকা সেই অব্যক্ত অনুভূতির রেখাগুলি দেয়ালে টাঙালে একটি উষ্ণ ও আবেগময় পরিবেশ তৈরি হয় ঘরে। এছাড়া, আপনি চাইলে রঙিন বা নকশাদার পুরোনো কাপড়ের টুকরো, স্কার্ফ বা ওড়না দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এগুলো শুধু দেয়াল ঢাকবেই না, বরং ঘরের রঙ এবং টেক্সচারে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন

ঘরের বাইরে থেকে কুড়িয়ে আনা জিনিসপত্র ব্যবহার করেও ঘর সাজানো যায় – এই ধারণাটি শুধু সাশ্রয়ীই নয়, বরং পরিবেশবান্ধব এবং সৃজনশীলতারও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। যেমন ধরুন, হাঁটার পথে চোখে পড়া সুন্দর কিছু শুকনো ডালপালা, ঝরেপড়া পাতাগুলো বা রঙিন কিছু ছোট পাথর – এইসবই হতে পারে আপনার ঘর সাজানোর দারুণ উপকরণ।
এই ডালপালা দিয়ে তৈরি করতে পারেন একটি সুন্দর মিনিমালিস্টিক দেয়াল সাজানো আর্ট, যা আপনার বসার ঘরে দেবে একটি অন্যরকম অনুভুতি। আবার রঙিন পাথরগুলো ছোট গ্লাস বাটিতে বা ট্রেতে সাজিয়ে রাখলে সেগুলো যেমন দৃষ্টিনন্দন দেখাবে, তেমনি ঘরের সৌন্দর্যে আনবে একটি প্রাকৃতিক ভারসাম্য। শুকনো ফুল বা বীজভর্তি পুরনো কাঁচের বোতল বা ফুলদানিতে রাখলে, তা হয়ে উঠতে পারে একটি অসাধারণ টেবিল সেন্টারপিস।
ইনডোর প্ল্যান্ট লাগান

গাছ শুধু পরিবেশকেই সতেজ রাখে না, ঘরের সৌন্দর্যও বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরোয়া গাছপালা ঘরের বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে, স্ট্রেস কমায়, এমনকি মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে।আপনার ঘরে যদি আগে থেকেই ইনডোর প্ল্যান্ট থাকে, তাহলে একটু যত্ন নিয়ে সেগুলোর টব পরিবর্তন করে দিন – নতুন রঙিন বা সৃজনশীল নকশার পাত্রে গাছ লাগালে পুরো ঘরের পরিবেশে নতুনত্ব আসবে। শুধু তাই নয়, গাছগুলোর স্থান পরিবর্তন করলেও ঘরের লুক অনেকটাই বদলে যায়। শোবার ঘরের এক কোণে, জানালার ধারে, টিভি ইউনিটের পাশে কিংবা খাবার টেবিলের মাঝখানে গাছ রাখলে ঘর হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত ও স্টাইলিশ।
যদি আলাদা করে ইনডোর প্ল্যান্ট না-ও কিনতে পারেন, তাহলেও সমস্যা নেই। আশপাশে থাকা বনফুল, মানিপ্লান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট বা পাতাবাহার জাতীয় গাছ এনে ছোট পাত্রে লাগিয়ে ঘরের এক কোণে রাখলেই হবে। এক কাপ কফির মতোই একটা সবুজ গাছও মনকে প্রশান্ত করে তোলে।
এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করে দেখুন, আপনার ঘর কতটা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে! আপনার পছন্দের আর কোন টিপস আছে ঘর সাজানোর জন্য? নিচে কমেন্ট করে জানান!