আজকাল আমাদের প্রায় সব কাজই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হয়। ভাবুন তো, একটা দিন যদি হঠাৎ করে দেখেন আপনার সব দরকারি তথ্য উধাও তখন কেমন লাগবে? আঁতকে উঠার মতো ব্যাপার, তাই না? আসলে, আমাদের স্মার্টফোনগুলো এখন শুধু কথা বলার যন্ত্র নয়, এটা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও, ব্যাঙ্কিং ডিটেলস – মানে সবকিছু ধারণ করে। আর এই ডিজিটাল যুগে, আমাদের এই মূল্যবান ডেটাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা কিন্তু খুব জরুরি একটা বিষয়।
আমরা হয়তো অনেকেই ভাবি, “আমার ফোনে আর কী এমন আছে যে হ্যাকাররা নজর দেবে?” কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই সামান্য অসাবধানতাতেও আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই! একটু সচেতন হলেই কিন্তু আপনি আপনার মোবাইলটিকে হ্যাকারদের হাত থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখতে পারেন। আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই উপায়গুলো।
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড অথবা পিন ব্যবহার করুন

আপনার ফোনের স্ক্রিন এবং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রাথমিক স্তরে এটি একটি অপরিহার্য অভ্যাস। আমরা প্রায়শই এমন সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার ভুল করি যা সহজেই অনুমান করা যায়, যেমন ‘১২৩৪৫‘, ‘abcd‘, অথবা আমাদের নিজেদের নাম বা জন্মতারিখ। এই ধরনের সরল পাসওয়ার্ডগুলো যেন হ্যাকারদের জন্য খোলা আমন্ত্রণপত্র, যা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং ডিভাইসে অননুমোদিত অ্যাক্সেস লাভ করতে সাহায্য করে।
এই ঝুঁকি এড়াতে, একটি জটিল এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। একটি আদর্শ শক্তিশালী পাসওয়ার্ডে ছোট হাতের এবং বড় হাতের অক্ষরের মিশ্রণ, সংখ্যা এবং বিভিন্ন বিশেষ চিহ্ন (@, #, $, %, ^, &, *, !) থাকা উচিত। এই ধরনের মিশ্রণ হ্যাকারদের জন্য আপনার পাসওয়ার্ড অনুমান করা বা ক্র্যাক করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে। মনে রাখবেন, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা এবং অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। একই পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় ব্যবহার করলে, একটি অ্যাকাউন্ট Compromise হলে আপনার অন্যান্য অ্যাকাউন্টগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
আধুনিক স্মার্টফোনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ পদ্ধতি, যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এবং ফেস আনলক। এই প্রযুক্তিগুলো নিঃসন্দেহে আপনার ডিভাইস আনলক করার প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং সুবিধাজনক করে তোলে, পাশাপাশি এটি সুরক্ষার একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। আপনার অনন্য বায়োলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করার কারণে, অন্যদের পক্ষে আপনার ডিভাইসে অ্যাক্সেস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এই প্রযুক্তিগুলো ত্রুটিমুক্ত নয় এবং কিছু পরিস্থিতিতে এগুলো bypass করাও সম্ভব। তাই, শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলকের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করে, একটি শক্তিশালী পিন বা পাসওয়ার্ড ব্যাকআপ হিসেবে সেট করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও দেখুনঃ মোবাইল এর ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়
আপনার ডিভাইসের সফটওয়্যার সর্বদা আপডেট রাখুন

মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, যেমন অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস, এবং আপনার ইনস্টল করা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন নিয়মিত আপডেট করা আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তার একটি অপরিহার্য অংশ। আসলে, এই আপডেটগুলো কেবল নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করে না, বরং এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে – এগুলো আপনার ডিভাইসের সুরক্ষাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
সফটওয়্যার নির্মাতারা নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা ত্রুটি এবং দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করেন এবং আপডেটের মাধ্যমে সেগুলোকে সমাধান করেন। যখন আপনি কোনো আপডেট ফেলে রাখেন, তখন আপনার ডিভাইসটি সেই পুরনো দুর্বলতাগুলো নিয়েই চলতে থাকে। আর এখানেই হ্যাকাররা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তারা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন – আপনার সংবেদনশীল ডেটা, আর্থিক তথ্য, এমনকি আপনার মূল্যবান ছবি ও ভিডিওগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
কল্পনা করুন, আপনার বাড়ির দরজায় একটি দুর্বল তালা লাগানো আছে। চোরেরা সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহজেই আপনার ঘরে প্রবেশ করতে পারে এবং আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করতে পারে। মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপের পুরনো সংস্করণগুলো ঠিক সেই দুর্বল তালার মতোই কাজ করে। হ্যাকাররা বিভিন্ন ম্যালওয়্যার এবং ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সেই দুর্বলতার সুযোগ নেয় এবং আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করে আপনার ডেটা চুরি করতে পারে, আপনার কার্যকলাপের উপর নজর রাখতে পারে অথবা আপনার ডিভাইসটিকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অতএব, যখনই আপনার ডিভাইসে কোনো আপডেটের নোটিফিকেশন আসে, এটিকে অবহেলা করবেন না। সঙ্গে সঙ্গেই সেই আপডেটটি সম্পন্ন করুন।
আরও দেখুনঃ ফোন হ্যাং করলে কি করবেন? জেনে নিন!
পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন

বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই পেলে আমরা অনেকেই আনন্দিত হই, কারণ এর মাধ্যমে সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। তবে এই সুবিধাটি কিন্তু সব সময় নিরাপদ নাও হতে পারে। হ্যাকাররা প্রায়শই এই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে এবং দুর্বল সুরক্ষার সুযোগ নিয়ে আপনার স্মার্টফোন বা অন্যান্য ডিভাইস থেকে সংবেদনশীল ডেটা চুরি করতে পারে।
পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে আপনার কার্যকলাপ সহজে নজরে রাখা সম্ভব। এর ফলে, আপনি যখন কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করেন বা কোনো তথ্য প্রবেশ করেন, তখন সেই তথ্য হ্যাকারের কাছে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে, যখন আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন ব্যাঙ্কিং ডিটেলস, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ নথি শেয়ার করেন, তখন এই ঝুঁকি আরও অনেক বেড়ে যায়। এই ধরনের তথ্য চুরি হলে আপনার আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও লঙ্ঘন হতে পারে।
এই ঝুঁকি এড়াতে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা সংবেদনশীল কাজ, যেমন অনলাইন ব্যাঙ্কিং বা আর্থিক লেনদেন, পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে করা উচিত নয়। যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়াও, পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় আপনার ডিভাইসের ফায়ারওয়াল চালু রাখুন এবং অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার আপডেট করে রাখুন। কোনো সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা বা অজানা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা থেকে বিরত থাকুন।
শুধুমাত্র বিশ্বস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন

প্লে স্টোর (Play Store) এবং অ্যাপ স্টোর (App Store) হলো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের জন্য বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মগুলো কঠোর নিরাপত্তা প্রোটোকল মেনে চলে এবং ডেভেলপারদের অ্যাপ জমা দেওয়ার আগে একাধিক স্তরের নিরাপত্তা পরীক্ষা সম্পন্ন করে। এর ফলে, এই স্টোরগুলোতে থাকা অ্যাপগুলো সাধারণত ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার (malware) থেকে সুরক্ষিত থাকে। গুগল প্লে প্রোটেক্ট (Google Play Protect) এবং অ্যাপল তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে অ্যাপগুলোর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করে।
তাই, প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর বাদে অন্য কোনো অনিরাপদ ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ্লিকেশন (mod games/apps) ডাউনলোড করার মানে হলো আপনি নিজেই আপনার মোবাইল হ্যাক হতে সাহায্য করছেন। এইসব প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যাপ আপলোডের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নিরাপত্তা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না। ফলে, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ডেভেলপাররা খুব সহজেই ক্ষতিকর কোড বা ম্যালওয়্যার যুক্ত অ্যাপ্লিকেশন ছড়িয়ে দিতে পারে।
কাজেই, সবসময় প্লে স্টোর অথবা অ্যাপ স্টোরের মতো নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকেই অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করুন। অপরিচিত বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইট এবং উৎসগুলো এড়িয়ে চলুন।
অ্যাপের অনুমতিগুলো ভালোভাবে দেখে নিন

স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অ্যাপ ইনস্টল করার সময় সেগুলোর চাওয়া অনুমতিগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা। প্রায়শই আমরা না দেখেই “পরবর্তী” বা “ইনস্টল” বোতামে ক্লিক করে ফেলি, যা ভবিষ্যতে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
একটি নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত অ্যাপ্লিকেশন কখনোই অপ্রয়োজনীয় অনুমতির জন্য অনুরোধ করবে না। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনের ছবি তোলা এবং ভিডিও করার জন্য ক্যামেরার অ্যাক্সেস, সম্ভবত স্টোরেজের অ্যাক্সেস (ছবি ও ভিডিও সংরক্ষণের জন্য) এবং মাইক্রোফোনের অ্যাক্সেস (ভিডিওর সাথে শব্দ ধারণের জন্য) প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এই অ্যাপটির কখনোই আপনার কনট্যাক্ট লিস্টে থাকা নম্বরগুলো, আপনার মেসেজগুলো (এসএমএস বা অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের বার্তা), আপনার কল লগ বা আপনার ডিভাইসের অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্যের অ্যাক্সেস চাওয়া উচিত নয়। যদি কোনো ক্যামেরা অ্যাপ এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় অনুমতি চায়, তবে সেটি নিঃসন্দেহে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
যখন কোনো অ্যাপ্লিকেশন তার মূল কার্যকারিতা সম্পাদনের জন্য অপ্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে বসে, তখন বুঝতে হবে যে এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেই অ্যাপটি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারে, আপনার অজান্তে স্প্যাম মেসেজ পাঠাতে পারে, অথবা আরও খারাপ কিছু করতে পারে।
সন্দেহজনক লিঙ্ক এবং মেসেজ থেকে দূরে থাকুন

আজকাল, আমরা প্রায়শই ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমে বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব, যেমন – অবিশ্বাস্য ছাড়, আকর্ষণীয় পুরস্কার, অথবা জরুরি নোটিশের মতো বার্তা পেয়ে থাকি। এই বার্তাগুলোতে একটি করে লিঙ্ক দেওয়া থাকে, যেগুলোতে ক্লিক করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এই লিঙ্কগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
এই ধরনের সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে ক্ষতিকর সফটওয়্যার, যাকে ম্যালওয়্যার বলা হয়, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। এই ম্যালওয়্যার আপনার ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে, এমনকি আপনার অজান্তেই বিভিন্ন আর্থিক জালিয়াতির সাথে আপনাকে যুক্ত করতে পারে।
অতএব, আপনাদের সকলের কাছে আমার অনুরোধ, কোনো প্রকার সন্দেহজনক লিঙ্ক বা মেসেজে ভুলেও ক্লিক করবেন না। যদি কোনো বার্তা আপনার কাছে অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে সেই লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। একই সাথে, আপনার মূল্যবান ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন – আপনার পাসওয়ার্ড বা ওটিপি (OTP), কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করুন

একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নিঃসন্দেহে আপনার অনলাইন সুরক্ষার প্রথম স্তর। তবে, শুধুমাত্র পাসওয়ার্ডের উপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। হ্যাকাররা অত্যাধুনিক কৌশল ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড চুরি করতে পারে – যেমন ফিশিং, ম্যালওয়্যার, বা ডেটা ব্রিচ। একবার যদি আপনার পাসওয়ার্ড তাদের হাতে চলে যায়, তবে আপনার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে চলে যেতে পারে, যার ফলস্বরূপ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে, আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি আপনার পরিচয়ও চুরি হতে পারে।
এই ঝুঁকি মোকাবিলার একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কার্যকর উপায় হলো টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) চালু করা। 2FA হলো একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করার সময় দুটি ভিন্ন ধরনের প্রমাণপত্র (Verification Factor) ব্যবহার করতে বলে। প্রথম প্রমাণপত্রটি হলো আপনার পরিচিত কিছু – সাধারণত আপনার পাসওয়ার্ড। দ্বিতীয় প্রমাণপত্রটি হলো আপনার কাছে থাকা কিছু – যেমন আপনার মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ডিভাইস।
বর্তমানে, প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ এবং অনলাইন সার্ভিসে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনের সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে। Gmail, Facebook, Instagram, Twitter, অনলাইন ব্যাঙ্কিং প্ল্যাটফর্ম এবং আরও অনেক সেবায় আপনি এই সুরক্ষা স্তর যোগ করতে পারবেন। যেসব অ্যাপ এবং সার্ভিসে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনের সুবিধা আছে, সেগুলোর সেটিংস-এ গিয়ে আজই এই সুরক্ষা ফিচারটি চালু করুন।
প্রয়োজন না হলে ব্লুটুথ এবং ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখুন

আপনার ফোনের ব্লুটুথ এবং ওয়াই-ফাই যদি প্রয়োজন না হয়, তাহলে অবশ্যই বন্ধ করে রাখুন। এই দুটো অপশন চালু থাকলে হ্যাকারদের আপনার ডিভাইসের সাথে কানেক্ট হওয়ার এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার সুযোগ বেড়ে যায়। তাই, যখন ব্যবহার করছেন না, তখন এগুলো বন্ধ রাখা আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নিয়মিত ব্যাকআপ নিন

কল্পনা করুন, কোনো অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে আপনার ফোনটি হারিয়ে গেল, চুরি হয়ে গেল, অথবা দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো কারণে এর ডেটা মুছে গেল বা দূষিত হয়ে গেল। এমন পরিস্থিতিতে, যদি আপনার ডেটার ব্যাকআপ না থাকে, তাহলে আপনার বহু মূল্যবান স্মৃতি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। এই ক্ষতি কতটা বেদনাদায়ক হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
অন্যদিকে, যদি আপনি নিয়মিত ব্যাকআপ করে রাখেন, তাহলে এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলেও আপনি সহজেই আপনার ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। আপনার স্মৃতিগুলো অক্ষত থাকবে, আপনার প্রয়োজনীয় কনট্যাক্টস হাতের কাছেই থাকবে, এবং আপনার ডিজিটাল জীবন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসবে।
ডেটা ব্যাকআপ করার বিভিন্ন সহজ উপায় রয়েছে। আপনি আপনার ফোন বা কম্পিউটারের বিল্ট-ইন ব্যাকআপ ফিচার ব্যবহার করতে পারেন, অথবা গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স, বা মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভের মতো ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি একটি এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভে আপনার ডেটা ব্যাকআপ করে রাখতে পারেন।
অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন

আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো নিঃসন্দেহে উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট এবং বিল্ট-ইন সুরক্ষা ব্যবস্থা একটি প্রাথমিক স্তর তৈরি করে, যা অনেক সাধারণ হুমকি থেকে আপনার ডিভাইসকে রক্ষা করতে পারে। তবে, ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান জটিল বিশ্বে এবং ম্যালওয়্যারের নিত্যনতুন আক্রমণের মুখে, এই অন্তর্নির্মিত সুরক্ষা স্তরটি যথেষ্ট নাও হতে পারে।
একটি ডেডিকেটেড অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ্লিকেশন আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এটি নিয়মিতভাবে আপনার ফোন বা কম্পিউটারের ফাইল এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্ক্যান করে, সন্দেহজনক আচরণ শনাক্ত করে এবং ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার, র্যানসমওয়্যার এবং অন্যান্য বিপজ্জনক প্রোগ্রামগুলোকে সনাক্ত ও অপসারণ করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলো প্রায়শই রিয়েল-টাইম সুরক্ষা প্রদান করে, যার মানে হলো কোনো ক্ষতিকর প্রোগ্রাম আপনার ডিভাইসে প্রবেশের চেষ্টা করলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সেটিকে ব্লক করতে পারে।
তবে এটা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি যে, একটি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করাই আপনার ডিভাইসের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। নিরাপত্তা একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া এবং এর জন্য একাধিক স্তরের সুরক্ষা প্রয়োজন।
উপরে উল্লেখ করা নিয়মগুলো, যেমন অজানা উৎস থেকে অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল না করা, সন্দেহজনক লিঙ্ক বা ইমেইল ক্লিক না করা, এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সাবধানে শেয়ার করা, অ্যান্টিভাইরাসের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সচেতনতা এবং সতর্কতাই শেষ পর্যন্ত আপনার ডিভাইসকে বিভিন্ন অনলাইন হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারে।
তাহলে আর দেরি কেন? আজই আপনার মোবাইলের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন!
আরও দেখুনঃ অফলাইন ইউপিএস এবং অনলাইন ইউপিএস এর মধ্যে পার্থক্য