তীব্র দাবদাহে যখন জনজীবন ওষ্ঠাগত, তখন শরীরকে সুস্থ রাখা এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা তাই অত্যন্ত জরুরি। গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীরের হজমক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত গরমে শরীর ক্লান্ত থাকে এবং অনেক খাবার হজম করতে সমস্যা হয়। তাই এমন কিছু খাবার রয়েছে যা এই সময়ে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এগুলো কেবল হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না, বরং শরীরকে আরও বেশি অসুস্থ ও দুর্বল করে ফেলতে পারে।
তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো কি কি যা গরমে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
এই নিবন্ধে যা যা থাকছে
অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার (Extra oily and spicy food)

গরমের সময় আমাদের শরীর এমনিতেই বাইরের উষ্ণতার কারণে গরম থাকে। এই পরিস্থিতিতে তেল ও মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে, যা অস্বস্তি ও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয়। এর ফলে হজম প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হযে বুক জ্বালা, অ্যাসিডিটি বা গ্যাস formation-এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি থাকে। ফ্যাট হজম হতে বেশি সময় লাগে এবং এটি শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। ধীর মেটাবলিজমের কারণে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়, যা গরমের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, অতিরিক্ত ফ্যাট গ্রহণ ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা গ্রীষ্মকালে আরও বেশি কষ্টদায়ক হতে পারে।
অতিরিক্ত মশলাদার তরকারি, বিশেষ করে যেগুলোতে ঝাল এবং গরম মশলার ব্যবহার বেশি, সেগুলোও গ্রীষ্মকালে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
রেড মিট বা লাল মাংস (Red Meat)

লাল মাংস, যেমন গরু বা খাসির মাংস, সাধারণভাবে অন্যান্য অনেক খাবারের তুলনায় হজম হতে বেশি সময় নেয়। এর প্রধান কারণ হলো এতে তুলনামূলকভাবে ফ্যাট ও প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। প্রোটিন একটি জটিল খাদ্য উপাদান এবং ফ্যাট হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে। এই কারণে, লাল মাংস পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকে এবং সম্পূর্ণভাবে হজমের জন্য বেশি সময় প্রয়োজন হয়।
এছাড়াও, লাল মাংস খাওয়ার পর আমাদের শরীর এই মাংস হজম করার প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়াটি “ডায়েট-ইনডিউসড থার্মোজেনেসিস” (Diet-Induced Thermogenesis) নামে পরিচিত। খাদ্য হজমের সময় শরীর যে শক্তি ব্যয় করে, তার একটি অংশ তাপ আকারে নির্গত হয়। যেহেতু লাল মাংসে প্রোটিন এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই এটি হজম করার জন্য শরীরকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়, যার ফলে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়।
এই পরিস্থিতিতে, গরমকালে হালকা প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। সহজে হজমযোগ্য প্রোটিনের মধ্যে অন্যতম হলো মাছ, বিশেষ করে ছোট মাছ। ছোট মাছে ফ্যাট কম থাকে এবং এটি দ্রুত হজম হয়। স্কিন ছাড়া চিকেনও একটি ভালো বিকল্প, কারণ এতে ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। ডাল একটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস এবং এটিও তুলনামূলকভাবে সহজে হজমযোগ্য। ডিম, বিশেষ করে সেদ্ধ ডিম, একটি উৎকৃষ্ট প্রোটিনের উৎস এবং এটিও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Foods)

গরমকালে আমাদের শরীর প্রখর তাপমাত্রার সাথে লড়াই করে। এই সময়, ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীরে জলের অভাব দেখা দিতে পারে, যা ডিহাইড্রেশন নামে পরিচিত। ডিহাইড্রেশন ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করা শরীরের জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে। চিপস, নুডলস, সফট ড্রিংকস এবং কৃত্রিম জুসে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ, চিনি এবং প্রিজারভেটিভ থাকে। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরের জন্য সহজে হজমযোগ্য নয়।
অতিরিক্ত লবণ শরীর থেকে আরও বেশি জল টেনে নেয়, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত চিনি শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করলেও, তা দ্রুত হ্রাস পায় এবং তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রিজারভেটিভ এবং অন্যান্য কৃত্রিম উপাদানগুলো হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।
গরমকালে সুস্থ থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই এই ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। মনে রাখবেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করাই গরমকালে সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।
আরও দেখুনঃ কিভাবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলবেন?
মিষ্টি পানীয় (Sugary Drinks)

কোমল পানীয়, কৃত্রিম প্যাকেটজাত ফলের রস এবং অন্যান্য মিষ্টি পানীয়গুলোতে চিনির মাত্রা অনেক বেশি থাকে। এগুলো পান করার পরপরই রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যার ফলে আমরা সাময়িকভাবে উদ্যমী অনুভব করি। কিন্তু এই উদ্দীপনা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়, এবং এর পরেই শরীর ক্লান্ত ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের পানীয় ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকিও বাড়ায়। অতিরিক্ত চিনি শরীর থেকে পানি টেনে নেয়, যা শরীরে পানির অভাব সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আমাদের এমন পানীয় নির্বাচন করা উচিত যা শরীরকে দীর্ঘক্ষণ সতেজ রাখতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পানি ও খনিজ সরবরাহ করতে পারে। এক্ষেত্রে পানি হলো সর্বোত্তম বিকল্প। এটি প্রাকৃতিক এবং শরীরের জন্য অপরিহার্য। পানির পাশাপাশি ডাবের পানি একটি চমৎকার পানীয়, যা ইলেক্ট্রোলাইটসে ভরপুর এবং শরীরকে দ্রুত রিহাইড্রেট করতে সাহায্য করে।
তাজা ফলের রস আরেকটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প, তবে এক্ষেত্রে চিনি যোগ করা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। ফলের প্রাকৃতিক মিষ্টি যথেষ্ট। বাসায় তৈরি লেবুর শরবতও একটি রিফ্রেশিং পানীয়, যা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক। এছাড়া, অতিরিক্ত ঘাম বা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে হালকা লবণ ও চিনি মেশানো স্যালাইন পান করা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি শরীরের হারানো লবণ ও খনিজ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
চা ও কফি (Tea and Coffee)

চা ও কফি এমন দুটি জনপ্রিয় পানীয়, যেগুলোর মধ্যে ক্যাফেইন নামক একটি উত্তেজক উপাদান থাকে। এই ক্যাফেইন মূত্রবর্ধক (diuretic) হিসেবে কাজ করে, যার অর্থ হলো এটি আমাদের কিডনিকে বেশি পরিমাণে প্রস্রাব তৈরি করতে উদ্দীপিত করে। ফলে শরীর থেকে পানি দ্রুত বেরিয়ে যায় এবং শরীরের ভেতরের পানির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। বিশেষ করে গরমকালে যখন শরীর ঘামের মাধ্যমে অনেক পানি হারায়, তখন অতিরিক্ত চা বা কফি পান করলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
তাই গ্রীষ্মকালে চা বা কফি পান করার সময় পরিমাণের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি। একান্তই যদি পান করতে হয়, তবে তা যেন সীমিত পরিমাণে হয় এবং পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। এর চেয়ে ভালো হলো, এই গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং হাইড্রেটেড রাখতে চা বা কফির বদলে ঠান্ডা হার্বাল টি, লেবু পানি, ডাবের পানি, ফলের রস কিংবা ঘরে তৈরি শরবতের মতো প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর পানীয় বেছে নেওয়া।
বাসি খাবার (Stale Food)

গরমকালে তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে খাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এই সময়টায় বাতাসে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, যা খাবারে দ্রুত আক্রমণ করে এবং সেটিকে অল্প সময়েই বাসি বা দূষিত করে তোলে। ফলে যদি কেউ অসাবধানতাবশত বাসি বা নষ্ট খাবার খেয়ে ফেলেন, তাহলে পেটের সংক্রমণ, বমি, পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কিংবা মারাত্মকভাবে ডায়েরিয়ার মতো রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
তাই গরমকালে খাবার সংরক্ষণ ও গ্রহণের বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কখনোই বাসি বা আগের দিনের খাবার খাওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে যেসব খাবার দুধ, ডিম, মাছ, মাংস কিংবা শাকসবজির সঙ্গে তৈরি—এই ধরনের খাবার গরমে খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রতিদিন যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু রান্না করা হয় এবং সেই খাবারই টাটকা অবস্থায় খেয়ে ফেলা হয়। এই অভ্যাস শুধু আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখবে না, বরং গ্রীষ্মকালীন রোগবালাই থেকেও নিরাপদ রাখবে।
পেঁয়াজ ও রসুন (Onion and Garlic)

অনেকেই পেঁয়াজ ও রসুনের স্বাদ ও উপকারিতার জন্য এগুলো খাদ্যতালিকায় রাখতে পছন্দ করেন। পেঁয়াজ ও রসুন স্বাভাবিকভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত। তবে গ্রীষ্মকালে, যখন পরিবেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে, তখন কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুনের ঝাঁঝালো স্বাদ ও তীব্র গন্ধ অনেক সময় শরীরে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের হজমে সমস্যা আছে বা যাঁরা অ্যাসিডিটিতে ভুগছেন, তাঁদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া একেবারেই উপযুক্ত নয়।
তবে রান্না করা অবস্থায়, অর্থাৎ তরকারি, ডাল বা অন্যান্য রান্নায় পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করলে এই উপাদানগুলোর স্বাদও উপভোগ করা যায় এবং এগুলোর স্বাস্থ্য উপকারিতাও পাওয়া যায়, কিন্তু শরীরে তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না।
রাস্তার খাবার (Street Food)

রাস্তার খাবার অনেকের কাছেই সহজলভ্য, সস্তা ও সুস্বাদু মনে হলেও, বাস্তবতা হলো—এই ধরনের খাবার সাধারণত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, যখন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তখন রাস্তার ধুলাবালি, গরম বাতাস ও পরিবেশে ভাসমান জীবাণুর পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে এই খাবারগুলো আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
রাস্তার খাবার বেশিরভাগ সময় খোলা অবস্থায় রাখা হয়, যেখানে ধুলাবালি, মাছি ও অন্যান্য কীট-পতঙ্গ সহজেই বসে পড়ে। এমনকি অনেক সময় খাবার প্রস্তুতকারীরা হাত ধোয়ার নিয়ম মানেন না, কিংবা বিশুদ্ধ পানি ও ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করেন না। এই সব কারণে রাস্তার খাবারে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
গরমকালে এই জীবাণুগুলোর প্রভাব আরও তীব্র হয়ে ওঠে, কারণ তাপমাত্রা জীবাণু বৃদ্ধির জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। ফলে এসব খাবার খাওয়ার পর পেটের গোলমাল, হজমের সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি, এমনকি ফুড পয়জনিংয়ের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল প্রতিরোধক্ষমতার মানুষের জন্য এই ঝুঁকি আরও বেশি।
অ্যালকোহল (Alcohol)

অ্যালকোহল এমন একটি পদার্থ যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালিতে নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ এটি শরীর থেকে পানি দ্রুত বের করে দেয়। ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড বা পানিশূন্য হয়ে পড়ে। গ্রীষ্মকালে যখন শরীর ঘামের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই অনেক পানি হারায়, তখন অ্যালকোহল পান করলে সেই পানিশূন্যতা আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়, যা একান্তই ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রাণঘাতীও হতে পারে।
এছাড়াও, অ্যালকোহল শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়ায় এবং রক্তনালীকে প্রসারিত করে, যার ফলে গরমে শরীর আরও বেশি গরম অনুভব করে। গ্রীষ্মকালীন পরিবেশে এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে এবং মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বমি, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
ডুবো তেলে ভাজা খাবার(Deep fried food)

গ্রীষ্মকালে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়, আর এই সময় যদি অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার খাওয়া হয়—যেমন সমুচা, সিঙ্গারা, পুরি, ফিশ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই বা পেঁয়াজি—তবে শরীরের ভিতরে উত্তাপ আরও বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের খাবারে চর্বি ও তেলজাত উপাদান বেশি থাকার কারণে এগুলো হজমে সময় নেয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই হজমের সমস্যা, গ্যাস, অম্বল ও বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
তেলেভাজা খাবার শরীরকে ভারী ও ক্লান্ত করে তোলে, বিশেষ করে যখন গরমের কারণে শরীর নিজেই দুর্বল হয়ে থাকে। এছাড়াও, এই খাবারগুলো শরীরকে ডিহাইড্রেট করে অর্থাৎ শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, ফলে পানিশূন্যতার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এতে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, তন্দ্রাচ্ছন্নতা বা হিট এক্সহস্টনের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
তবে কেউ যদি মাঝে মাঝে এসব খাবার খেতে চান, তাহলে তা অবশ্যই সকালে খাওয়া উচিত, যখন হজমশক্তি তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয় থাকে। দিনে একবার অল্প পরিমাণে খাওয়া গেলে তা তেমন ক্ষতিকর না হলেও, নিয়মিত বা অতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
পরিশেষে উল্লেখ্য
গরমকালে সুস্থ থাকতে হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। উপরের খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, হালকা ও সহজে হজমযোগ্য খাবার খান এবং তাজা ফল ও সবজি বেশি করে খান। আপনার সচেতনতাই আপনাকে গরমের অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে।